মোঃ শোয়াইব, হাটহাজারী:
সীতাকুন্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, অগ্নিকান্ড ও ব্যাপক হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেও তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডকে দায়ী করা হচ্ছে সেই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তৈরী হয় হাটহাজারী থানাধীন চসিক ১নং দক্ষিন পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ঠান্ডাছড়ি রিসোর্ট এলাকা সংলগ্ন আল রাজী ক্যামিকেল কমপ্লেক্সে।
সীতাকুন্ডের কন্টেইনার ডিপো বিস্ফোরণ ঘটনার মত একই ঘটনা হাটহাজারীতেও ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় সীতাকুন্ডের ঘটনা যথাযথ তদন্তের আগ পর্যন্ত এই কারখানায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন বন্ধ রাখার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গতকাল বিকালে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য আলহাজ্ব মঞ্জুুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু ও চসিক ১নং দক্ষিন পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার জাফর আলম সহ স্থানীয়রা আল রাজী ক্যামিকেল কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে এ দাবি জানান। কমপ্লেক্সের জিএম ইব্রাহীম খলিল ও ম্যানেজার এডমিন মোবিন হোসেন খানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন।
পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের
আওয়ামীলীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী জানান, সীতাকুন্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেটার জন্য দায়ী হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আমাদের হাটহাজারীতেই উৎপাদন হচ্ছে। সে ঘটনার পর আমরা হাটহাজারীবাসী তথা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরা যদি সরকারি নীতিমালা মেনে যথাযথ নিরাপত্তার সাথে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড তৈরী করে তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে অন্য কোনো অপশক্তি যাতে কাজ করতে না পারে তার জন্য এলাকার ছাত্র যুবক তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছে। তবে যতদিন পর্যন্ত সীতাকুন্ড বিএম কন্টেইনার ডিপোর ঘটনায় তদন্ত শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত এই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন ও ডেলিভারি বন্ধ রাখার জন্য আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছি। কারখানায় যাতে কেউ কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা পাহাড়ায় থাকব তবে শর্ত হচ্ছে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড উৎপাদন আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।
সাবেক কমিশনার মোঃ জাফর আলম চৌধুরী সীতাকুন্ড ঘটনায় ডিপো কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলেন তাদের অবহেলায় হতাহতের মত ঘটনা ঘটেছে। নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করতে আসা নয়জন ফায়ার ফাইটার মারা গেছেন। দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার মানুষ খুবই উত্তেজিত।
এ কারাখানা থেকে প্রতিদিন রসায়নিক পদার্থ নিয়ে অনেক গাড়ি বের হচ্ছে। যদি একটা ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে কি হবে এ হাটহাজারীর অবস্থা সেটা ভাবলেই গা শিউরে উঠে। তাই সরকারের দেয়া সময় পর্যন্ত বিপদজনক এ পদার্থ উৎপাদন বন্ধ ও বাহিরে চালান বন্ধ থাকবে।
আল রাজী ক্যামিকেল কমপ্লেক্সের ম্যানেজার এডমিন মোবিন হোসেন খান জানান, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর দাবী মেনে নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যতক্ষন পর্যন্ত সরকারী তদন্ত রিপোর্ট না আসবে ততদিন কারখানা থেকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কোন চালান বাহিরে যাবেনা। ক্যামিকেল কমপ্লেক্সের জিএম ইব্রাহীম খলিলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনিও একই কথা নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, গত ২০১৯ সালে হাটহাজারী থানাধীন ১নং দক্ষিন পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ঠান্ডাছড়ি এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে আল রাজী ক্যামিকেল কমপ্লেক্সটি তৈরী করা হয়। সীতাকুন্ডের বিএম ডিপো সহ হাটহাজারীর আল রাজী ক্যামিকেল কমপ্লেক্সের মালিক একই শিল্পগ্রুপ।
প্রায় তিন একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই কারখানায় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছাড়াও পিভিসি পাইপ, পিভিসি ডোর এসব সামগ্রী তৈরী করা হয়। এই কারাখানায় উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড রপ্তানির জন্য সীতাকুন্ডের বিএম ডিপোতে রাখা হত।
Leave a Reply