ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক >>> বাংলাদেশে ৪ দিনের সফর শেষে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর প্রধান)ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) অবিচল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন গ্রান্ডি।সোমবার (০৩ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, তিনি প্রায় ৮ বছর ধরে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের উদারতার প্রশংসা করেছেন।গ্রান্ডি বলেন, “সংকটের শুরু থেকে বাংলাদেশ এক অসাধারণ আশ্রয়দাতার পরিচয় দিয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠী তাদের সামান্য সম্পদই শরণার্থীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।”তিনি আরও বলেন, “শরণার্থীদের মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের মুখ্য সমাধান। যতক্ষণ এই সুযোগ না তৈরি হয়, আমরা বাংলাদেশের পাশে আছি, যাতে দেশটিকে কোনোভাবেই একা এই সংকটের মোকাবিলা না করতে হয়।”কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে, গ্রান্ডি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শরণার্থীদের জন্য টেকসই আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানান; যাঁরা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে বসবাস করছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রায় সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়।অংশীদারদের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে হাইকমিশনার গ্রান্ডি বলেন, “সময়ের আবর্তে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান না থাকায়, সম্পদ সংগ্রহ করা চ্যালেঞ্জিং এবং অগ্রাধিকার দুটোই রয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি আন্তর্জাতিক সমর্থন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায় যা ঘটতে পারে তা হলে বাংলাদেশ সরকার, সহায়তা সংস্থাগুলো এবং শরণার্থীদের দ্বারা বাস্তবায়িত গুরুত্বপূর্ণ সব কর্মকাণ্ড গুরুতরভাবে প্রভাবিত হবে। যা হাজার হাজার মানুষকে ক্ষুধা, রোগব্যাধি এবং নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে ফেলবে।”কক্সবাজারে, হাইকমিশনার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় সম্প্রতি পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। ইদানীং সেখানে সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। যা রোহিঙ্গাদের দুর্দশাকে বাড়িয়েছে। ফলে অনেকেই অন্য কোনো উপায় না পেয়ে নিরাপত্তার খোঁজে বাংলাদেশে আসার ঝুঁকি নিচ্ছেন।হাইকমিশনার গ্রান্ডি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপ, যেমন: ইমাম, নারী ধর্মীয় শিক্ষক এবং ক্যাম্পের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মায়েদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।তিনি বলেন, “যখনই প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় টেকসই প্রত্যাবাসনের সুযোগ তৈরি হবে, তারা প্রত্যেকেই আমার কাছে তাদের নিজ জন্মভূমিতে ফেরার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন।” হাইকমিশনার আরো বলেন, “ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য, বিশেষ করে যারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন এমন নারীদের জন্য, কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে এবং তরুণদের দক্ষতা ও সহনশীলতা অর্জনে সহায়তা করতে হবে।”দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তরুণ শরণার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে হাইকমিশনার বলেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে জীবিকা এবং উন্নয়নের সুযোগগুলিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন, যেখানে জনসংখ্যার ৫২ শতাংশই ১৮ বছরের কম বয়সী।তিনি বলেন, “শিক্ষা লাভের লক্ষ্যে তাঁরা দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করছে। তাঁদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে তাঁরা নিজ সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করতে চায়। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে গেলে তাঁদের প্রত্যাশার গণ্ডি আরও সীমিত হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।”কক্সবাজার এবং ভাসানচরের শরণার্থী ক্যাম্পগুলো, অনেকটাই আশেপাশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর এলাকার মতো সব সময় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিধস এবং অন্যান্য প্রতিকূল আবহাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকে, পাশাপাশি রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের কাণ্ডের ঝুঁকি। বড় ভূমিধসের প্রভাব এবং শরণার্থীদের জন্য এর বিধ্বংসী পরিণতি দেখার পর, গ্র্যান্ডি সরকারি অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠকের সময় দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য ‘কোর সাপোর্ট’ এর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।এটি ছিল হাইকমিশনারের ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশ সফর। এমন সময়ে তিনি সফরে এলেন, যখন ইউএনএইচসিআর, বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য মানবিক অংশীদাররা যৌথ সাডাদান পরিকল্পনা ২০২৫ (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) ঘোষণার পরিকল্পনা করছেন। যেখানে শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের মানবিক চাহিদাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত থাকবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তহবিল একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। আর, বিগত বছরগুলোতে অর্থায়ন সংকট তো ছিলই।কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোর চাইতে আর কোথাও মানবিক সহায়তার জীবন রক্ষাকারী ভূমিকা এত স্পষ্ট নয়,” গ্র্যান্ডি তার সফর নিয়ে এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) একটি পোস্টে বলেন।
Leave a Reply