দীর্ঘদিন ধরে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি নির্ভর পণ্য ছাড়াও দেশে কৃষকের ঘরে ধান উঠার সুফলও পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ধানের ভরা মৌসুমেও চালের বাজার চড়া থাকছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের ভোগ্যপণ্যের বুকিং দর বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তেলের বাজার। এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। এছাড়া ডাল-চিনি ও গমের বাজারও চাঙা। এর মধ্যে সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রভাবে পণ্য পরিবহনে খরচের প্রভাব পড়েছে। সবমিলিয়ে ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণী বরাবরের মতোই নিষ্পেষিত হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাকালে অনেক সাধারণ বেসরকারি চাকরিজীবির বেতন বাড়েনি। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যপণ্যের মধ্যে অনেক পণ্য রয়েছে যেগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর সব সময় এক রকম থাকে না। কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সেসব দেখার দায়িত্ব সরকারের। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারিদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করে। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার শুধুমাত্র রমজান এলেই বাজার মনিটরিং করে। মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছে মতো দাম বাড়ায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
এদিকে গত এক বছর আগে চিনির বাজার ছিল কেজি ৫২ টাকা, বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে ৭৬ টাকা, এছাড়া প্রতি কেজি ডাল বিক্রি হতো ৬০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। সয়াবিন তেলের অবস্থা তো খুবই খারাপ। প্রতি লিটার ১০৫ টাকার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এরইমধ্যে তেল ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটারে আরো ৭ টাকা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করে। সরকার সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিলেও কিছু কিছু দোকানি অতিরিক্ত দামে সয়াবিন বিক্রি করছেন এমন অভিযোগও করছেন ক্রেতারা।
এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের মতো সীমিত আয়ের লোকজনের সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করোনার অজুহাতে অফিসে বেতন অর্ধেক করে দিয়েছিল, তখন কিছু সঞ্চয় ছিল সেগুলো খরচ করতে হয়। এছাড়া করোনাকালীন অফিসে কারো বেতন বাড়ায়নি। যার ফলশ্রুতিতে পরিবার শহর থেকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।
কনজ্যুমার অ্যাসোেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বড় খড়গ পড়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ওপর। কারণ মধ্যবিত্তশ্রেণীর বেশিরভাগ লোককে সীমিত আয় দিয়ে চলতে হয়। এরইমধ্যে করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে গেছেন। গ্রামে গিয়ে করুন অবস্থায় দিনযাপন করছেন এমনও অনেকে আছেন। এছাড়া চাল-ডাল ও তেল-চিনির বাজারও বেড়েছে। তাই বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত লোক আয়ের সাথে ব্যয়ের সামাঞ্জস্য করে চলতে পারছে না।
Leave a Reply