আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিচার বিভাগে নারীর ক্ষমতায়ন

বিচার বিভাগে নারীর ক্ষমতায়ন নতুন ইতিহাস, ৫ নারী বিচারপতি


 

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্রথমবারের মতো ৫ নারী আইনজীবী একসঙ্গে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। বিচার বিভাগে নারীর ক্ষমতায়নে এই নিয়োগ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ৫ নারীর একসঙ্গে বিচারপতি হওয়ার ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতে নারীরা অনুপ্রেরণা পাবেন। নারীরা আইনপেশায় ক্যারিয়ার গড়তে উদ্বুদ্ধ হবেন।

নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫ নারী বিচারপতি হলেন, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি তামান্না রহমান ও বিচারপতি সাথিকা হোসেন।

৫ নারী বিচারপতি নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন কমিশনের প্রথম নারী চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, ২৩ জনের মধ্যে ৫ জন নারী, এটা ভালো সংখ্যা। আইন পেশায় নারীরা ভালো করছেন, নারীদের যে অগ্রগতি হয়েছে, এ নিয়োগ থেকে তা বোঝা যায়। ভবিষ্যতে নারীরা আইন পেশায় আরো ভালো করবেন, বিচার বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, এই আশা রাখছি।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, যে ৫ নারী আইনজীবী বিচারপতি হয়েছেন তাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তাদের কর্মদক্ষতা ও মেধার বলেই তারা বিচারপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন। নিশ্চয়ই তাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হবেন।

৫ জন নারী বিচারপতি নিয়োগকে ভালো সূচনা মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, এতদিন দেখে আসছি উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ হলে একজন নারী নিয়োগ দেওয়া হতো। অনেক নিয়োগে কোনো নারী নিয়োগ পেতেন না। এবার ৫ নারী আইনজীবীকে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটা আইনপেশায় নারীর অবদানের স্বীকৃতি। আমি বলব এটা ভালো সূচনা। মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই।

বিচার বিভাগে নারীর ক্ষমতায়ন নতুন পাঁচ নারী বিচারপতি

মুবিনা আসাফ : মুবিনা আসাফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আইন-পেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৩ সালে জজ কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি আইনপেশার শুরুতে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্টে ও ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি মুবিনা আসাফ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান ছিলেন।

নাসরিন আক্তার : তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে আইনপেশায় যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্য নির্বাহী সদস্য, সিনিয়র সহ-সম্পাদক ও ট্রেজারার হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন নাসরিন আক্তার।

আইনুন নাহার সিদ্দিকা : আইনুন নাহার সিদ্দিকার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। বাবা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি জজ কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের ও ২০২০ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ২০ বছর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইনজীবী হিসেবে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করেছেন।

তামান্না রহমান : বিচারপতি তামান্না রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আইনপেশায় যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০১৫ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলএলএম ল’ ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।

সাথিকা হোসেন : সাথিকা হোসেন ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৩ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন।

আরো ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি

গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাদের নিয়োগ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

নিয়োগ পাওয়া ২৩ জন বিচারপতি হলেন— গোলাম মর্তুজা মজুমদার, সৈয়দ এনায়েত হোসেন, মনসুর আলম, সৈয়দ জাহেদ মনসুর, কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, যাবিদ হোসেন, মুবিনা আসাফ, কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, আবদুল মান্নান, তামান্না রহমান, শফিউল আলম মাহমুদ, হামিদুর রহমান, নাসরিন আক্তার,সাথিকা হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, তৌফিক ইনাম, ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন, শেখ তাহসিন আলী, ফয়েজ আহমেদ, সগীর হোসেন, শিকদার মাহমুদুর রাজী, দেবাশীষ রায় চৌধুরী।

এই ২৩ জনের মধ্যে ৫ জন নারী বিচারপতি। গত ৯ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি নতুন নিয়োগ পাওয়া বিচারপতিদের শপথবাক্য পাঠ করান।

অনলাইন ডেস্ক
সূত্র : ঢাকা পোস্ট।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর