চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক: সম্প্রতি চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার ঢাকাস্থ কার্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে সমিতির সদস্য ও চট্টগ্রামবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমে ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তফা ইকবাল চৌধুরী (মুকুল) সমিতির পক্ষে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শতোর্ধ্ববর্ষী ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রতিষ্ঠান “চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা’র সুনাম ও ঐতিহ্য নষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে জনৈক এম এ হাশেম রাজু (যিনি সমিতির জীবন সদস্যও নন) এর নেতৃত্বে ২০-৩০ জন (বহিরাগত যুবক) গত ১১ এপ্রিল (শুক্রবার) আনুমানিক বিকেল ৩ টায় বন্ধের দিনে ৩২ তোপখানা রোডস্থ সমিতি ভবনে সন্ত্রাসী ও ডাকাতি কায়দায়, অবৈধ, জোরপূর্বক জবরদখলের উদ্দেশ্যে সমিতির ৯ম তলায় সভাকক্ষে সভাপতির চেয়ারে বসেন। সমিতির সদস্য না হয়েও নিজেকে চট্টগ্রাম সমিতির নতুন সভাপতি ঘোষণা করলে সমিতির কর্মচারীরা তাদের পরিচয় জানতে চান। তখন তারা কর্মচারীদের গালিগালাজ ও মারধর করে টেনেহিঁচড়ে ভবন থেকে বের করে দেন। সব তালাচাবি জোর করে নিয়ে সমিতি ভবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলিল নষ্ট করাসহ ভাঙচুর চালান। উপরন্তু বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমিতি দখল করার দাবি করে অপপ্রচারে লিপ্ত হন এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে পরের দিন আবার আসবেন বলে চলে যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কর্মচারীদের কাছ থেকে জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে সমিতির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তফা ইকবাল চৌধুরী মুকুল এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক পারভেজ মো. চৌধুরী সমিতি ভবনে যান। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ও স্থির ছবি দেখে তারা বিষয়টি নিশ্চিত হন।
পরের দিন ১২ এপ্রিল বিকাল ৪ টায় পূর্বনির্ধারিত সমিতির নববর্ষ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভা ছিল। আগের দিনের অনাকাক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওদিনই বেলা দুপুর ১২টায় সভাপতির নির্দেশক্রমে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জরুরি ভিত্তিতে নির্বাহী পরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ট্রাস্টি বোর্ড ও হাসপাতাল কমিটির সদস্যদের নিয়ে যৌথসভা আহ্বান করেন। সমিতি ভবনে ওই চার কমিটির নেতারা আসা শুরু করেন এবং যারা আসছিলেন তাদের মধ্যে সিনিয়র নেতারা সভাপতির কক্ষে অবস্থান করেন। এ সময় আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবারও বহিরাগত এম এ হাশেম রাজুর নেতৃত্বে সমিতির বিপথগামী কিছু সদস্য ও বহিরাগত ৪০/৫০ জন নিয়ে প্রথমে হল রুমে প্রবেশ করেন। সমিতির কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চস্বরে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং সমিতির কর্মকর্তাদের ছবি ভাঙচুর এবং সমিতির নির্বাচিত পরিষদকে জোরপূর্বক পদত্যাগের জন্য একযোগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
অন্যদিকে মো. শাহজাহান মন্টু ভবনের নিচে লিফটের সম্মুখে সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আসা বর্তমান কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে সভাপতি সমিতি ভবন থেকে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যান। পহেলা বৈশাখ ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথিকে অবহিত করা হলে তিনি বিশৃঙ্খলা এড়ানোর স্বার্থে, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো এবং সমিতির ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে অনুষ্ঠান বাতিল করে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার জন্য নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক ১৪ এপ্রিলের অনুষ্ঠান স্থগিতের নোটিশ করা হয় এবং শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়। থানা থেকে জিডি নিয়ে একজন সাব ইনস্পেক্টর তদন্ত করতে আসলে সমিতির নেতাদের ভবনে আসতে বলেন। তখন এম এ হাশেম রাজু ও ফরিদ উদ্দিন খানের সরাসরি নির্দেশে জালাল আহমদ, সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ ও মনজুর মোরশেদ মামুন সমিতির সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিনের ওপর হামলা চালান। পরবর্তীতে পুলিশ চলে যেতে বললে সবাই চলে আসেন। কিন্তু দখলদাররা কিছুক্ষণ পরে এসে সমিতি ভবনে পুনঃঅবস্থান নেন। পরবর্তীতে বিষয়টি থানার গোচরীভূত হলে ১৪ এপ্রিল দখলদারদের বের করে দিয়ে সমিতির সহ-সভাপতি সাবেক জেলা জজ সফিউল আজম চৌধুরীর কাছে বুঝিয়ে দেন। বর্তমানে সমিতির নিয়মিত কার্যক্রম চলমান আছে।
দখলদাররা সমিতি ভবনে অবস্থান নিয়ে সমিতির কর্মচারীদের জিম্মি করে সমিতির প্যাড ব্যবহার করে এম এ হাশেম রাজুকে আহ্বায়ক ও মো, ফরিদ উদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করে একটি এডহক কমিটির তালিকা প্রকাশ করে। কতিপয় বিপথগামী জীবন সদস্য ও জীবন সদস্য নয় এমন ব্যক্তিদের নিয়ে সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধী অবৈধ এডহক কমিটি গঠন, চট্টগ্রাম ভবন দখলের পাঁয়তারা, নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের হুমকি প্রদান, ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপদস্ত ও শারীরিকভাবে হামলা, পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়ে সমিতির জীবন সদ্যস্যদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যা সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধী ও বেআইনি। চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা’র নির্বাহী কমিটি সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং জীবন সদস্যদের ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতি দুবছরের জন্য নির্বাচিত হয়।
Leave a Reply