আজ ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

উখিয়ায় বনভুমির জায়গা দখল:প্লট বানিয়ে বিক্রি করছে নারী দখলদস্যু মিনু সিন্ডিকেট!


উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের উখিয়ার ঘাট বনবিটের আওতাধীন বনভুমির জায়গা দখল করে নতুন ইটের ঘর নির্মাণ করছে একটি দখলদার চক্র। প্লট বানিয়ে পৃথক-পৃথক ভাবে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ-লাখ টাকা।ভুয়া স্ট্যাম্প বানিয়ে এসব বনভুমির জায়গা বিক্রি ও নতুন ঘর নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে স্বামী পরিত্যক্তা দখলদার চক্রের নারী দখলদস্যু রোশন আরা মিনু।মিনুর দখলের হাত থেকে জন চলাচলের পথও রেহাই পায়নি। সে প্রকাশ্যে বলে বেড়াই ডিএফও, রেঞ্জ অফিসার, বিট অফিসার, ফরেস্টার,এলাকার মাস্তান, নেতা নাকি তার হাতের মুটোই। তার হাত অনেক লম্বা।

জানা গেছে,উখিয়ার ঘাট গ্রামের জনৈক রোশান আরা বেগম প্রকাশ মিনু একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। তার ভোটার এলাকা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড জলপাইতলী খিজারী ঘোনায়। স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ৩ সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন প্রায় ১৫/১৬ বছর পুর্বে স্বামীর ঘর ছেড়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। তিন সন্তান বাবার বাড়িতে রেখে কাজের সন্ধানে গৃহকর্মী হিসেবে ওমানে চলে যান। ২/৩ বছর থাকার পর দেউলিয়া হয়ে চলে আসেন।

রোশান আরা মিনু নিজেকে অসহায়ত্ব দেখিয়ে পিতা মো.শফির ভিটি জায়গায় আশ্রয় নিয়ে একটি কুঁড়ে নির্মাণ করে গত ১০/১২ বছর পুর্ব থেকে বসবাস করে আসছিলেন। পিতার অসুস্থ্যতা এবং নিজেকে অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পিতার অগোচরে ভুয়া স্ট্যাম্প বানিয়ে পিতার ভোগ দখলীয় প্রচুর জায়গা দখল করে নেয়। পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের অজুহাত তুলে ঘেরাবেড়া দিয়ে উক্ত জায়গায় পর-পর ৩/৪টি ঘর নির্মাণ করে গোপনে বিক্রি করে প্রায় ২০লাখ টাকা হজম করেছেন। এখনও তার নেতৃত্বে বনভুমির জায়গা দখল করে বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। পিতার অগোচরে এসব বনভুমির জায়গা বিক্রির খোঁজ-খবর পাওয়ায় পিতা বারণ করলে গুরুতর অসুস্থ্য বৃদ্ধ পিতাকে ভাড়াটিয়া লোকজনের সহযোগিতায় একাধিকবার মারধর করেন মিনু। আর যারা জায়গা ক্রয় করছেন, তারা কি কালো টাকার মালিক? যদি না হয়ে থাকেন তাহলে কেন গোপনে জায়গা কিনছেন? তাও বনবিভাগের,  এমন প্রশ্ন বয়োবৃদ্ধ রেজিস্ট্রার ভিলিজার মো: শফির।

অসুস্থ্য মো.শফির ভোগ দখলীয় জায়গা ক্রয়ের নামে দখল পুর্বক নতুন ইটের ঘর নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন দখলদার চক্র। এতে কোন প্রকার তোয়াক্কা করছেন না বিধিনিষেধও। গত মাসাধিককাল সময় ধরে জবর দখল করা উক্ত জায়গায় দুটি ঘর থাকা স্বত্বেও নতুন করে ইটের তৈরী ঘর নির্মাণ করে যাচ্ছেন। জানা গেছে, একই এলাকার মৃত বাঁচা মিয়ার ছেলে ছৈয়দুর রহমান, ছৈয়দুর রহমানের কন্যা ও নুরুল ইসলামের স্ত্রী সাজেদা বেগম ও জামাতা নুরুল হক লম্বা নুরুর ছেলে নুরুল ইসলাম উক্ত জায়গা পরিমাপ করে নতুন ইটের ঘর তৈরী অব্যাহত রেখেছেন। উক্ত ঘর তৈরীতে ভাড়াটিয়া লোকজন এনে পিতা’কে হাকাবকা করে প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছেন দখলদস্যু রোশান আরা মিনু। গুরুতর অসুস্থ বৃদ্ধ মো.শফি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মিনু আমার কন্যা হলেও,সে আমাদের কারো কথা শোনে না। এলাকার শালিস বিচার কিছুই মানে না। পুলিশের নিকট অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পায়নি। তিনি বনবিভাগের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেছেন, আমাদের চলাচলের পথটিও দখল করে নিয়েছে। আমার গরু আত্মসাৎ করেছেন দুইটি। আমার হাওলাতি নেওয়া সহ প্রায় ৩ লাখের বেশী টাকা আত্মসাৎ করেছে মিনু। পথ দখল, জায়গা দখল, জায়গা বিক্রি এবং নতুন ঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাওয়ায় বহুবার মেরেছে। মিনুর সাথে সখ্যতা রয়েছে বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসী প্রকৃতির দখলদার চক্র, মাদক কারবারি ও চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে রহস্যজনক সখ্যতা। যেকোন কাজে সন্ত্রাসী ব্যবহার করে থাকেন মিনু।

মো: শফি বলেন, এদেশে কি বিচার নাই? আমি বনভুমির জায়গা বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় জায়গা ক্রেতা চক্রের সহযোগিতায় মারধর করার জন্য তেড়ে আসে। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা দুই সংবাদকর্মীর উপস্থিতিতে অশালীন গালিগালাজ করেন দখল সম্রাজ্ঞী মিনু। এ প্রসঙ্গে মিনুর বক্তব্য সে ২০ শতক জায়গা বাবা’র নিকট থেকে কিনেছেন। বাবা’র অভিযোগ মিনু ভুয়া স্ট্যাম্প সৃজন করে প্রচুর জায়গা দখলের পাশাপাশি চলাচলের রাস্তাও দখলে নিয়েছে।

বনভুমির জায়গায় নতুন ঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়ার ঘাট বনবিট কর্মকর্তা বিকাশ দাশ বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। কেউ যাতে উক্ত জায়গা ক্রয় না করেন বা দখল হস্তান্তর করতে না পারেন, সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, ওখানে জনবল সংকট।মহিলা ফরেস্ট গার্ড নেই। রোশান আরা মিনুর ওখানে গেলে হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে বহু মহিলা তেড়ে আসেন। কোন স্টাফ নাই বলে জানান। উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, খবর পেয়েছি। বিট অফিসার’কে পাঠিয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর