মো: শোয়াইব, হাটহাজারীঃ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে মুড়ি ও চিড়ার মোয়া (চট্টগ্রামের ভাষায় মোলা)। এ খাদ্যপণ্য তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে না বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন।অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরিকৃত এ খাবার স্বাস্থ্যের অপকার ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতের মৌসুম আসায় বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (ব্রান্ড) নাম ব্যবহার এ খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরজমিনে দেখা গেছে, মুখরোচক এই মোলাগুলো সব বয়সের মানুষ খেতে পছন্দ করছে। হাটহাজারীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে বাসা ভাড়া কিংবা দোকান ভাড়া নিয়ে মোলা তৈরির এসব অবৈধ কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। নোংরা পরিবেশে থাকা অস্বাস্থ্যকর খেজুরের রসের সাথে মুড়ি মিশ্রনে তৈরি হচ্ছে এইসব মোয়া। হাটহাজারীর একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমের মধ্যে মেঝেতে পড়ে আছে মুড়ি এবং গুড়, এরপর একটি নোংরা পাতিলে তৈরি হচ্ছে এসব খাবার। এই খাদ্যগুলো তৈরি করে আবার সুন্দর করে প্যাকেট করে বিক্রি করছে স্থানীয় সব দোকানে। মোড়কে লেখা আছে, নকল হইতে সাবধান।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে আলাপকালে চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘এ ধরনের খাদ্যপণ্য খাওয়ার কারণে মানবশরীরে ডায়রিয়াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেকা দিতে পারে। যদি এসব পণ্যে ক্যামিক্যাল ব্যবহার হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আরও জটিল ব্যধিও হতে পারে।’
[caption id="attachment_20480" align="alignnone" width="600"] ছবি: অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে মোয়া [/caption]ভোক্তারা বলছেন, এইসব অবৈধ কারখানায় যদি বড় আকারে লেখা থাকে নকল হইতে সাবধান তাহলে বিষয়টা আসলেই উদ্বেগের। আমরা কীভাবে বুঝব কোনটা আসল বা কোনটা নকল? তারা এমন ভাবে প্যাকেটজাত করে, কারখানার আসল পরিবেশ না দেখলে বাহির থেকে বুঝার কোনো উপায় নাই আসল-নকল শনাক্ত করার। কিন্তু শীতকালে যখন এই খাবারগুলো বের হয় বাসায় বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যেতে হয়। আমরা বুঝতে পারছি এগুলো স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে না। এগুলো মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতি। এই সময়েগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেটের নজরদারি বাড়লে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে।
এ বিষয়ে কারখানায় থাকা শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা সুন্দর পরিবেশে এগুলো
তৈরি করছি আমাদের মনে হচ্ছে এখানেই যথেষ্ট পরিমাণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
বিএসটিআই এর অনুমোদন আছে কী না জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এটি আমাদের মালিক জানবে আমরা এ বিষয়ে কিছু জানিনা। আমরা টাকার জন্য এখানে কাজ করছি অন্য বিষয়ে আমরা অবগত নই।’
কারখানার ম্যানেজার মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আমরা মৌসুমী ব্যবসায়ী আমরা শুধু শীতকাল আসলেই তিন মাস ব্যবসা করি। আমরা বিএসটিআই থেকে অনুমোদন নিতে হয় সেটি আমরা জানি না। কিন্তু আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় তৈরি করছি।
এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে খবর নিয়ে বিএসটিআইয়ের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
জানতে চাইলে বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক (মেট) ও অফিস প্রধান মো. মাজাহারুল হক বলেন, ‘পণ্যটি তাদের আওতাভুক্ত না হওয়ায় এসব চক্র সুযোগ নিচ্ছে, তবে বিপণনের ক্ষেত্রে তারা যে স্টিকার ব্যবহার করছে তার অনুমোদন নিতে হবে বিএসটিআই থেকে।’