মো. শোয়াইব, হাটহাজারীঃ উপজেলার ভূমি অফিসের সম্মুখে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক ঘেঁষে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মিত ভূগর্ভস্থ ডাস্টবিনটি কোনো কাজেই আসছে না। এতে প্রায় ৫ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে।
জানা গেছে, বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া (বাস্তবায়িত ও চলমান) এ প্রকল্পে এক একটি আধুনিক ডাস্টবিন স্থাপনে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৮ টাকা ব্যয় হচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া এসব ডাস্টবিন স্থাপনের ফলে জনগণের লাখ লাখ টাকা যেমন গচ্ছা যাচ্ছে, তেমনি পৌরবাসীদের যত্রতত্র ফেলা বর্জ্যরে দুর্গন্ধের দুর্ভোগও দূর হচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির আওতায় নির্মিত এই ডাস্টবিন আর ব্যবহার করা যাবে না এমনটা জানালেন পৌর প্রকৌশলী।
পৌরবাসীর অভিযোগ, এই ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে অন্য কোনো স্থানে এই আধুনিক ভূগর্ভস্থ ডাস্টবিনটি নির্মিত হলে জনগণ সুফল পেতো।
এদিকে ডাস্টবিনটিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা না গেলেও এতোদিন ব্যবহার অনুপযোগী ডাস্টবিনটি দৃশ্যমান ছিলো, কিন্তু বর্তমানে এটি দখল নিয়েছে বাঁশের দোকান। সারি সারি বাঁশের নিচে ঢাকা পড়ে গেছে ডাস্টবিনটি।
আরও পড়ুন হাটহাজারীতে স্লুইচ গেইট ও বেড়িবাঁধ অকেজো, জনদূর্ভোগ চরমে
পৌর সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের ভূগর্ভস্থ ডাস্টবিনের উপকারিতা হলো, এগুলোর ময়লা-আবর্জনা চোখে পড়বে না এবং দুর্গন্ধও ছড়াবে না। এই আধুনিক বর্জ্য সংগ্রহাগারে থাকবে হাইড্রোলিক প্রেশারের মাধ্যমে ময়লা সংকোচনের প্রযুক্তি। ফলে এতে দ্বিগুণ বর্জ্য সংগ্রহ করা যায়। এ ধরনের ডাস্টবিন এমনভাবে নির্মাণ করা হয়, যেখানে কোনোভাবে বাইরে থেকে পানিও ঢুকতে পারে না এবং এটি পরিবেশবান্ধব।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্পটির সুফল ভোগ করতে না পারলে এটার পেছনে জনগণের এতোগুলো টাকা নষ্ট করা কার স্বার্থে! এ দায়ভার কে নিবে?
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান এ প্রসঙ্গে আলাপকালে চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে পরিবেশগতভাবে সুফল পাবেন পৌরবাসী।’
পৌরবাসিন্দা উদয় সেন বলেন, ‘অভিভাবকবিহীন এই পৌরসভা দেখার
কেউ নেই। বেলাল, মনোয়ার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি পৌরবাসিরা। এই যে
ভূগর্ভস্থ ডাস্টবিন নির্মাণ করে যে ৫ লাখ টাকা নষ্ট করা হলো বেলাল কী সেটা নিজের পকেট থেকে দেবে? নিশ্চয়ই না, বরং এই ধরনের প্রকল্প যতই করা যায়, ততই ২ থেকে ৩ পার্সেন্ট টাকা তার পকেটে যায়। তাই যতই প্রকল্প ততই তাদের লাভ। পৌর বাসিন্দাদের লাভ হউক আর না হউক কিন্তু তাদের লাভ বাড়তেই থাকে। প্রকল্প না দিলেই বরং তাদের ক্ষতি। এই মনোয়ার আর বেলালের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সীমা নেই বলেও জানান তিনি। বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যান মনোয়ার সকল কাজের সুপারভাইজার করে। এমনকি মনোয়ারকে ইদানিং পৌর প্রশাসকের সাথে উপজেলার অভিযানেও দেখা যাচ্ছে। এটা কি উচিত? এই অভিভাবকবিহীন পৌরসভা জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি বেলাল আর মনোয়ার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।’
প্রকৌশলী মুহিব বলেন, ‘পৌর প্রকৌশলীর অদক্ষতা ও পরিকল্পনায় দৈন্যতার কারনেই সরকারি ও পৌরবাসির টাকা নষ্ট হচ্ছে।
হাটহাজারী পৌর প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ খাঁন এ প্রসঙ্গে বলেন, ৫ ফুট গভীর ওই ভূ-গর্ভস্থ ডাস্টবিনটির তৈরী কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এমন ডাস্টবিন দেশের আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। আমরাই প্রথম এমন ডাস্টবিন নির্মাণ করেছি। তবে কাজ শেষ হলেও এটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক ঘেঁষে হওয়ায় এবং মহাসড়কটি আবারও ৬ লেনে হবে তাই এটি আমরা আর চালু করব না।’
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার আবু রায়হান বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’