আহসান উদ্দিন পারভেজ: জাতীয় সংসদের ২৯২নম্বর আসন চট্টগ্রাম ১৫। আসনটি চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। প্রায় দু’দশক আগে দাবি উঠেছিলো লোহাগাড়া উপজেলাকে পৌরসভায় রূপান্তর করার, আশ্বাসও দিয়েছিলেন অনেকে কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে সে দাবি ধোপে টেকেনি। এজন্য লোহাগাড়াবাসী অভিযোগ করে বলেন, ‘তাদের সাথে জনপ্রতিনিধিরা প্রতারণা করেছেন, ভোট চাইতে এলে লোহাগাড়াকে পৌরসভা করে দেয়ার অঙ্গীকার করেন, ভোট শেষ হলে সেটা ভুলে যান।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে লোহাগাড়া থানা গঠিত হয়েছিলো এবং ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। উপজেলা হওয়ার পর থেকে লোহাগাড়াকে পৌরসভায় রূপান্তরের দাবি উঠে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক কোন্দল, মতানৈক্যতাসহ নানাবিধ জটিলতায় এখনও এই উপজেলা পৌরসভাতে রূপান্তরিত হয়নি।
১৯৯১ সালের পর এই আসনের সাংসদ ছিলেন জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী। তিনি উপজেলাটিকে পৌরসভায় রূপান্তরের প্রথম প্রক্রিয়া শুরু করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি দ্বিতীয়বার এই আসনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু ওইসময় তার উদ্যোগ নেয়া প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্থ হয়। বর্তমানে এই আসনের নির্বাচিত সাংসদ ক্ষমতাসীন সরকারি দল, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। দায়িত¦গ্রহনের পর তিনিও লোহাগাড়াকে পৌরসভায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তার উদ্যোগে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই ফাইলটিও ফেরত এসেছে বলে দায়িত্বশীল নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
কেন এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া, কোথায় প্রতিবন্ধকতা এসব বিষয়ে জানতে উপজেলার জনপ্রতিনিধি (চেয়ারম্যান) ও কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে চাটগাঁর সংবাদ। তাদের কারও দাবি এটির প্রতিবন্ধকতার নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক কোন্দল, কারও দাবি, একটি পৌরসভা হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ক্রাইটোরিয়া (মানদণ্ড) থাকা প্রয়োজন সেগুলো এই উপজেলার নেই। আবার কেউ দাবি করছেন এতে জটিল মতানৈক্যতা রয়েছে। কোনো কোনো চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ কিংবা মতামত গ্রহনও করা হয়নি।
লোহাগাড়া উপজেলার দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান। তিনি বটতলী শহর উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব। চাটগাঁর সংবাদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘একটি পৌরসভা গঠন করতে হলে সেই পৌরসভায় কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোটার থাকতে হয়। লোহাগাড়ায় ভোটার আছে ১৮ থেকে ২০ হাজারের মতো। তাই এই মানদণ্ড পূরণের জন্য আমিরাবাদ ও আধুনগরকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নামকরণের একটি জটিলতা রয়েছে। অনেকে পৌরসভার নাম আমিরাবাদ করার প্রস্তাব দিয়েছে। কারণ আমিরাবাদে ভোটার সংখ্যা বেশি। এছাড়া নড়াইলের একটি পৌরসভার নামও লোহাগাড়া। সেক্ষেত্রে একই নামে দুটি পৌরসভা হয়ত হবেনা। এছাড়া সীমানা নিয়েও কিছু জটিলতা আছে।’
প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এই আসনের দায়িত্ব পালনকালে লোহাগাড়াকে পৌরসভায় রূপান্তরের একাধিক উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালের দিকে চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের নেতৃত্বে আধুনগরের চেয়ারম্যান আইয়ূব চেয়ারম্যানসহ তিনজন বাদী হয়ে পৌরসভায় রূপান্তরের প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, তৎকালে পৌরসভা নির্ধারণের যে এরিয়া নির্ধারণ করা হয়েছিলো তার মধ্যে জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল চেয়ারম্যানের বাড়িটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আধুনগরের স্থানীয় বাজারটাই কেবল সে এরিয়ায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তাই ওই মামলাটি করা হয়েছিলো। পরে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে মামলাটি তুলে নেন বাদীরা।
এ বিষয়ে জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘লোহাগাড়াকে পৌরসভায় রূপান্তরের উদ্যোগ আমিই প্রথম নিয়েছিলাম। শাহজাহান চৌধুরীর আমলে আধুনগরের বেশ কিছু এলাকা বাদ দিয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছিলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। তাই আমরা মামলাটি করেছিলাম।’
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সেটি গৃহীত হয়নি। ফাইলটিও ফেরত এসেছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে লোহাগাড়ার চেয়ারম্যান মো. নুরুচ্ছাফা চৌধুরী চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘লোহাগাড়াকে পৌরসভাতে রূপান্তরিত করতে প্রথম প্রতিবন্ধকতা হলো মতানৈক্যতা। আমরা লোহাগাড়াকে পৌরসভায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে একমত। তবে আমার কাছে এ বিষয়ে কখনও কোনো পরামর্শ বা মতামত চাওয়া হয়নি। সম্প্রতি প্রস্তাব পাঠানো এবং ফাইল ফেরত আসার বিষয়েও আমি কিছু জানিনা।’