অনলাইন ডেস্কঃ আমাদের সমাজে বিয়ের আগে দু’পক্ষের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন সংক্রান্ত যাবতীয় খোঁজ খবর নেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ঠিকই কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটাতেই নজর থাকে না কারো। সেটি হলো রক্তের গ্রুপের বিষয়টি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হওয়া ভালো নয়, এটি একটি বহুল প্রচলিত গুজব। এর কোনো সত্যতা নেই। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে স্ত্রী নেগেটিভ আর স্বামী পজিটিভ হলে এবং সন্তান পিতার গ্রুপ পেলে নবজাতকের জন্ডিসসহ কিছু জটিলতা হতে পারে, তবে তা আগে থেকে জানা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অর্থাৎ টিকার মাধ্যমে তা প্রতিরোধ করা যায়।
চিকৎসকদের পরামর্শ হলো-দাম্পত্য জীবন শুরুর প্রাক্কালে উভয়েরই নিজেদের ব্লাড গ্রুপ জানাটা অত্যন্ত জরুরি। স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর পজেটিভ হতে হবে। আর যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর পজেটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে। তবে স্বামীর গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় তাহলে কোনোভাবেই স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হওয়া চলবে না; অর্থাৎ সন্তান গ্রহণে জটিলতা দেখা দেবে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয় তাহলে তার স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে।
আরও পড়ুন শরীরে শক্তি জোগাতে ভুট্টা খান
সুস্থ্য সন্তানের জন্য স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ যেমন হওয়া উচিত
স্বামী-পজিটিভ(+)স্ত্রী-পজেটিভ(+)=সুস্থ্যসন্তান।
নেগেটিভ(-)নেগেটিভ(-)=সুস্থ্য সন্তান।
নেগেটিভ(-)পজেটিভ(+)=সুস্থ্য সন্তান।
পজিটিভ(+)নেগেটিভ(-)=প্রথম সন্তান সুস্থ্য, দ্বিতীয় থেকে সমস্যা।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ এবং স্ত্রীর নেগেটিভ হলে কী হতে পারে তা জেনে নিন: স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে কোনো সমস্যা হয় না। তবে স্ত্রী যদি নেগেটিভ হয় আর স্বামী যদি পজেটিভ হয় তাহলে ‘লিথান জিন’ বা ‘মারণ জিন’ নামে একটি জিন তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে জাইগোট তৈরিতে বাধা দেয় বা জাইগোট মেরে ফেলে। সেক্ষেত্রে মৃত বাচ্চার জন্ম হতে পারে। বাচ্চা হতে পারে জন্মান্ধ। এছাড়া যখন কোনো নেগেটিভ গ্রুপের মা পজেটিভ ফিটাস (ভ্রুণ) ধারণ করে তখন সাধারণত প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ডেলিভারির সময় পজেটিভ ভ্রুণের রক্ত, প্লাসেন্টারের (গর্ভফুল) বাধা ভেদ করে মায়ের শরীরে প্রবেশ করবে। মায়ের শরীরেও প্রসবের সময় যে রক্ত প্রবেশ করবে, তা প্রসবের কয়েক মাসের মধ্যেই মায়ের শরীরে আরএইচ এন্টিবডি তৈরি করবে।
যখন মা দ্বিতীয় সন্তান বহন করবেন, তখন যদি তার ভ্রুণের ব্লাডগ্রুপ আবার পজেটিভ হয়, তাহলে মায়ের শরীরে আগে যে এন্টিবডি তৈরি হয়েছিল সেটা প্লাসেন্টার বাধা ভেদ করে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করবে। আর যখন এটি ভ্রুণের শরীরে ঢুকবে তখন ভ্রুণের লোহিত রক্ত কনিকার সেল ভেঙে যাবে। এ সমস্যাকে চিকিৎসা বিদ্যায় বলা হয় আরএইচ ইনকমপ্যাটিবিলিটি।
আগে কখনো অপারেশন না হয়ে থাকলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে। শুধু সচেতন থাকতে হবে। স্বামীর ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ হলে, বাচ্চা জন্মের পরপরই বাচ্চার ব্লাডগ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। যদি নেগেটিভ হয় মায়ের মতো, তবে কিছু করার দরকার হয় না। আর পজেটিভ হলে এন্টি ডি ইনজেকশন নিতে হবে ডেলিভারির ৭২ ঘন্টার মধ্যে। আরও বিস্তারিত জানতে এবং বাচ্চা ধারণের আগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তথ্যসূত্র: আমারসংবাদ