আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলা-সম্পর্কিত আলোচনার উদ্দেশ্যে চীনে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জলবায়ু-সম্পর্কিত দায়িত্ব দেয়ার পর তিনি এ সফর করছেন। খবর বিবিসি।
চারদিনের এ সফরে চীনের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত শি জেনহুয়ার সঙ্গে দেখা করবেন কেরি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জন কেরির অফিস থেকে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বছরের শেষ দিকে জাতিসংঘের নির্ধারিত জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮-এর সফলতা নিশ্চিত করতে তিনি চীনের সঙ্গে ‘সম্পর্ক উন্নয়ন ও জলবায়ুবিষয়ক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি’ ত্বরান্বিত করতে চান।
যদিও ধারণা করা হচ্ছে, কেরি ও জেনহুয়ার মধ্যকার বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত নাও হতে পারে বা দুই দেশের এ প্রতিনিধিরা কোনো ঐকমত্যে নাও পৌঁছতে পারেন। তাই কেরির সফরকে আপাতত আলোচনা শুরুর একটি পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। হয়তো সবুজ জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়া কিংবা কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ক্ষেত্রে সাধারণ যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, ঘুরেফিরে সে-সম্পর্কিত আলোচনাই তারা করবেন।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র। চীনের বিনিয়োগ অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। তথ্যানুসারে, বিশ্বের মোট নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চীনের বিনিয়োগ ৫০ শতাংশেরও বেশি। যদিও তারা উভয়ই বিশ্বের বৃহত্তম দুই কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড্যান কামেন বলেন, ‘দুই দেশের আচারণ বিশ্বব্যাপী পরিবেশের গতিশীলতা এবং দূষণের স্তরের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। তাদের জ্বালানি ব্যবহারের ধরন ও সংশ্লিষ্ট দূষণের মাত্রা পরিবেশগত স্থায়িত্ব, বায়ুর গুণমান ও জলবায়ু পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখে। তারা উভয়ই বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিন্তু দুটি দেশের কাউকেই এখনো কার্বন নিঃসরণ কমাতে দেখা যাচ্ছে না।’
চীন-যুক্তরাষ্ট্র সরকার কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের জন্য লড়াই জারি রাখলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাহিদাবিষয়ক ভারসাম্য বজায় রাখতেও সচেষ্ট; যা তাদের পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপের দিকে পরিচালিত করে বলে পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
এটি খুব বেশি আগের কথা নয় যে চীন কয়লার ওপর নির্ভরতা হ্রাসে খুব একটা আগ্রহী ছিল। তাছাড়া দেশটি বর্তমানে এর জ্বালানি নিরাপত্তাকেও অগ্রাধিকার দিচ্ছে—এর অর্থ কয়লাশক্তিতে ফিরে যাওয়া। কারণ বায়ু ও সৌরশক্তির তুলনায় কয়লাশক্তিকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে দেখা হয়। তাছাড়া গত বছর চীন নাটকীয়ভাবে কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির অনুমোদনও দিয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকার দুটি আইন পাস করেছে, যা সবুজ জ্বালানিতে বিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করবে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আলাস্কার তেল ও গ্যাসের বৃহত্তম প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি থেকে জ্বালানি উত্তোলনের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি অনুসারে, ২০২২ সালে মার্কিন কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে।
জলবায়ুবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি তৃতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে চীন সফর করছেন। এর আগে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে পাঠানো শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও জ্যানেট ইয়েলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তীব্র বৈরী সম্পর্কে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে কেরির সফরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেননা জলবায়ু আলোচনার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের সঙ্গে চলমান স্থবির সম্পর্ক পুনরায় চালু করতে আগ্রহী।
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা
Leave a Reply