অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে ৪৩তম বিসিএসের ফল। দেশব্যাপী লাখো প্রতিযোগীকে পিছু হটিয়ে নিজেদের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন সুপারিশপ্রাপ্ত বিসিএস ক্যাডাররা। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে লড়াই করেছেন টিকে থাকার জন্য। আজকের আয়োজনে থাকছে বেশ কজনের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প। তুলে ধরছেন- সৈয়দ জাহিদ হাসান, আমান উল্লাহ, ইসরাত জাহান ও আশিকুজ্জামান
সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে
-মাহবুবুল আলম আসাদ
বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার এক তীব্র বাসনা কাজ করা শুরু করে। তবে স্নাতক শেষ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র ভাইকে দেখে বিসিএস-এর প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। দিনে গবেষণার কাজ এবং সন্ধ্যায় টিউশনি শেষ করে রাত ২-৩টা পর্যন্ত বিসিএসের জন্য পড়তে থাকি।
যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি : বড় ভাইদের পরামর্শের পাশাপাশি আমি গাইড বই ও মূল বই পড়েছি। এছাড়াও প্রতিদিন বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকা পড়তাম। তবে গণিত ও ইংরেজি দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমার তেমন পারদর্শিতা ছিল না। তাই যেদিন থেকে বিসিএস জার্নি শুরু সেদিন থেকে প্রতিদিন রুটিন করে এক ঘণ্টা ভোকাবুলারি, দুই ঘণ্টা ইংলিশ গ্রামার ও প্রায় তিন ঘণ্টার মতো গণিত করতাম। এর পাশাপাশি অন্য একটি করে বিষয় পড়তাম, সেটা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে একবার যে কোনোভাবে শেষ করার চেষ্টা করতাম। পরবর্তীতে আমি শুধু বার বার রিভাইস করতাম।
অনুপ্রেরণার উৎস ছিল যারা : কৃষি ক্যাডারে প্রথম হওয়া আমার মা-বাবার অবদান বেশি। আমার বাবা সব সময় বলতেন, ‘ধরো আমি যদি কখনো পৃথিবীতে নাও থাকি তবুও তুমি তোমাকে এমনভাবে গড়ো যেন আমি কবর থেকে শুনতে পাই যে, আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে।’ এছাড়াও অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রে আর একজনের কথা না বললেই নয়, নুসরাত জাহান শিম্মি। ৪১ বিসিএস প্রিলি যখন শুরু হয় তার ঠিক একমাস আগে মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়। সময় খুব স্বল্প আর বিশাল সিলেবাসের কারণে আমার দ্বারা বিসিএস এবার হবে না ভেবেছিলাম। ঠিক এ রকম সময়ে শিম্মি আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল, সাহস দিয়েছিল। সেদিন আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ্! অবশেষে ৪১তম বিসিএসে (প্রথম বিসিএস) উত্তীর্ণ হয়ে নন-ক্যাডার থেকে দশম গ্রেডের একটা চাকরি পাই। এরপর সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানী, বাবা-মা-শুভাকাক্সক্ষীদের দোয়ায় টানা তিন বিসিএস এ প্রিলি-রিটেন দেই। এর মধ্যে দুই বিসিএসেই সফল হই। এখন ৪৪তম বিসিএসের ফলাফলের প্রত্যাশায় আছি।
ছিল প্রতিকূলতা, এগিয়ে গিয়েছি : আমরা স্বভাবতই সাফল্যের গল্প শুনতে অভ্যস্ত কিন্তু ব্যর্থদের আহাজারি শুনতে বিরক্ত। আমি যতদূর দেখেছি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সবার বাবা-মা’ই বিশ্বাস করেন ও মনে-প্রাণে চান, ছেলে অনার্স পাস করলেই তার চাকরি হবে, তখন আর দুশ্চিন্তা থাকবে না। কিন্তু এ দেশে যে চাকরি নামক সোনার হরিণ পাওয়ার জন্য কী পরিমাণ অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয় সেটা শুধু বেকাররাই জানে। তবে সমালোচকদের সমালোচনা ও আর্থিক সংকট আমার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় প্রতিকূলতা মনে হয়েছে। প্রতি মাসে অন্তত দুইবার সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়া, সেই সাথে চার-পাঁচটা আবেদনের টাকা জোগাড় করা ছিল বেশ দুরূহ। অন্যদিকে অনার্স ও মাস্টার্সে ফলাফল মোটামুটি ভালো হওয়ায় শিক্ষকতায় ঝোঁকের জন্য ক্যাম্পাসও ছাড়তে পারছিলাম না। বিসিএস এবং শিক্ষকতা দুটি স্বপ্নই একসঙ্গে টেনে নিয়ে যাওয়া আমার বিসিএস যাত্রাকে কঠিন করেছিল।
প্রস্তুতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে সাহায্য করেছে : বিভিন্ন কাজে সারাদিন যখন বাইরে থাকতাম সেই সময় মোবাইলের মাধ্যমেই পড়তাম, বিসিএসের বিভিন্ন ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিয়মিত চোখ রাখতাম। পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন ও ইউটিউব ব্যবহার করে কনফিউশন আছে এমন বিষয় বুঝে নিতাম। পাশাপাশি অনলাইনে মক ভাইভা দিয়েছি। এছাড়াও ভাইভার প্রস্তুতির জন্য আমার মেসেঞ্জার গ্রুপ ছিল, সেখানে আমার বড় ভাই ও বন্ধুদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি।
যারা সফল হচ্ছেন না তাদের জন্য পরামর্শ : দীর্ঘ এই যাত্রায় সফল হতে চাইলে সৃষ্টিকর্তার মেহেরবানীর পাশাপাশি ধৈর্য ও পড়াশোনায় নিয়মিত হতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বিসিএস কিংবা চাকরিতে ব্যর্থতার মূল কারণ পড়াশোনায় ধারাবিকতার অভাব। এছাড়াও আমরা পড়ার থেকে অযথা ভাবনা-সমালোচনা-ফেসবুক এসবে বেশি সময় নষ্ট করি। চাকরি প্রার্থীরা এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে সফলতা দ্রুত আসবে বলে আমার বিশ্বাস। যারা সফল হচ্ছেন না তারা বিসিএস সিলেবাস অনুযায়ী মূল বই এবং গাইড বই অনুসরণ করতে পারেন পাশাপাশি বারবার পড়া ও পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে, এতে করে ভুলের সংখ্যা কমতে থাকবে।
সফলতার রাস্তা সেটাই যা আপনি মন থেকে চান
-রিদওয়ান উল ইসলাম
বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু : বিয়ের পরে ২০১৯ সালে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করি। ৪০ ও ৪১তম বিসিএস অংশগ্রহণ করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম। পরে বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করি। চাকরিরত অবস্থায় ৪৩তম বিসিএসের প্রস্তুতি ভালোভাবে নিয়েছিলেন। প্রিলির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার ১০ দিন পর কন্যা সন্তানের বাবা হলাম। চাকরি, পরিবার এবং পড়াশোনা সব একসঙ্গে চালাতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। লিখিত পরীক্ষায় পুরোপুরি মনোযোগী হতে পরীক্ষার কিছুদিন আগে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলাম। চাকরি ছাড়ার পর ফুলটাইম পড়াশোনা করা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। এ সময় যা পড়তাম তাই সামারি করে লিখে রাখতাম। প্রতিদিন লেখা খাতাগুলো স্বল্প সময়ে রিভিশন দিতে অনেক সহযোগিতা করেছিল।
বিসিএস সাফল্যের অনুভূতি : ফলাফল প্রকাশের দিন লালমনিরহাটে বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। সারাটা দিন খুবই টেনশন হচ্ছিল। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যার ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলাম। ফলাফল যদি নেগেটিভ হয় তাহলে ট্রেনে উঠে বাবা-মাকে জানাব, ‘আমি পারলাম না, আমার জন্য দোয়া করিও’। যে ফলাফলের জন্য তারা এতদিন মুখিয়ে আছেন, নেগেটিভ কিছু সরাসরি বলার মতো সাহস আমার ছিল না। যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশিত হলো। ফলাফল দেখার সাহস হচ্ছিল না, হাত-পা কাঁপছিল। মোবাইলের সার্চ অপশনে গিয়ে যখন দেখি পুলিশ ক্যাডারে নিজের নাম। আর এটাই আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা অভিজ্ঞতা : তিন ধাপের মাঝে সবচেয়ে কঠিন ধাপ হচ্ছে প্রিলি, যেখানে মস্তিষ্ক প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে। দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে লিখিত পরীক্ষায় প্রচুর মানসিক এবং শারীরিক চাপ থাকে। টাইম ম্যানেজমেন্ট এখানে অনেক বড় প্রভাবক। লিখিত পরীক্ষার অভিজ্ঞতা বলতে আমি বুঝি গণিতে ভালো করার অন্য কোনো বিকল্প নেই। খাতায় পৃষ্ঠা ভরিয়ে এলে কোনো লাভ নেই। যা লিখব তা পড়তে স্যারদের যেন বিরক্ত না লাগে। সর্বশেষ ধাপ ভাইবা নিয়ে বলতে গেলে আমি বলব আত্মবিশ্বাস এবং নিজের অবস্থান অনেক বেশি প্রভাব রাখে।
সফল হওয়ার প্রেরণা : জীবনের যেসব মুহূর্ত আমাকে ইতিবাচক শক্তি দেয় আমি সব সময় সেগুলো স্মরণ করি। কারণ জীবনে চলতে গেলে অনেক নেতিবাচক দিক আসবে। তাদের জন্য এই বিশেষ আয়োজন অব্যাহত রাখতে হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ইচ্ছা আছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিজেকে প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান সেবক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে চাই।
বিসিএস দিতে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ : জীবনে সফলতার সংজ্ঞা মানুষ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। যারা সিভিল সার্ভিসে আসতে চান তারা পরিশ্রম অব্যাহত রাখুন। ভাগ্য সহায় থাকলে ইনশাআল্লাহ ভালো কিছুই হবে। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক চাপে বিসিএস দিতে হবে এমন অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ আপনার সফলতার রাস্তা সেটাই হবে যা আপনি মন থেকে চান।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই ছিল মূল বিষয়
-মো. তুষার
বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু : ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে বাকৃবির কৃষি অনুষদে ভর্তি হয়। বিশ^বিদ্যালয়ে এসে নতুন এক লড়াইয়ের সম্মুখীন হয়। এ লড়াই হলো চাকরির মাঠে নিজের অবস্থান শক্তপোক্ত করার। বেছে নিলাম দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত পেশা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) নিজের নাম তালিকাভুক্ত করার লড়াই। শুরু করলাম কঠোর সাধনা।
বিসিএস সাফল্যের অনুভূতি : কৃষি ক্যাডারে দ্বিতীয় হওয়া এই ফলাফলের পেছনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি সময়ে নতুনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা এবং মানিয়ে চলাটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার ওইসব লড়াইয়ের সমষ্টি আজকের এই বাস্তবায়িত স্বপ্ন, একটি ক্যাডার অর্জন। সারা জীবন মনে রাখার মতো কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গর্ব করে বলার মতো এই যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ আমাকে প্রতিনিয়ত শিখিয়েছে আর একটু একটু করে তৈরি করেছে। আমার কাছে মনে হয় বিসিএস একটি সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রম যেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমসাময়িক সময়ের দেশপ্রবাহ কিংবা বিদেশনীতির কিছুটা হলেও আঁচ করা যায়। কথা বলা থেকে সুরে সুর মেলানোর মতো করে প্রস্তুত করা হয় প্রতিটি পরীক্ষার্থীকে।
পাশে যারা ছিল : স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ, বাস্তবায়ন করা ততটাই কঠিন। গুরুজনদের এমন মনোভাবের আবেশটুকুও পায়নি। এই কঠিন সময়ে বিসিএসের এত এত অনিশ্চয়তা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটাই মূল বিষয় ছিল আমার কাছে। হলে থাকার সুবাদে আমার অনেক শুভাকাক্সক্ষী ছিল, যারা সব সময় আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আমার এত বড় স্বপ্ন পূরণের অনুপ্রেরণার জোগান দিত তারা। সারা জীবন কৃতজ্ঞ রইব ওইসব মানুষদের প্রতি। তাদের প্রতিটি ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ আমার মনে অনেকটা আপন জায়গা করে নিয়েছে। তাদের বলা কথাগুলো আজও আমাকে শক্তি দিচ্ছে সামনের সময়ে আরও ভালো কিছু করার। পরম করুণাময় আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। পাশাপাশি আমার এই অর্জন অনেকটাই বাবা-মায়ের হাত ধরে। আমার পরিবারের কাছে আমি সব সময়ই সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ও মানসিকভাবে সাহস পেয়েছি। পরিবারের কাছে পাওয়া স্বাধীনতা আর সাহসই নিজেকে অধ্যবসায়ী করে রাখার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। আমার ওই দুশ্চিন্তার সময়গুলোতে সব সময় পাশে পেয়েছি বাবাকে এবং মাকে। আমার প্রথম আবেগের বড় অংশীদার ওই দুজন মানুষ।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি : প্রলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার ৩ ধাপেই আমি বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ করে পড়াশোনা করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে গ্রুপ স্টাডি হলো বড় কোচিং সেন্টার। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি খুবই কঠিন। তবে কৌশল অবলম্বন করলে খুব বেশি কঠিনও না। ইংরেজি, বিজ্ঞান ও গণিত এই তিন বিষয়ের সঠিক উত্তরে পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়। এই তিন বিষয়েই বেশি জোর দিয়েছি। অনেকেরই ভুল ধারণা আছে লিখিত পরীক্ষার প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর ডাটা কোটেশন আকারে তথ্যবহুল হতে হয়। অহেতুক ডাটা কোটেশন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নেই। প্রশ্নের উত্তর কী চেয়েছে সেটি আগে বুঝতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ডাটা কোটেশনের ব্যবহার শুধু সময়ের অপচয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একই প্রশ্নের উত্তর প্রায় কয়েক হাজার পরিক্ষার্থী লেখেন। সবার মধ্যে এগিয়ে থাকতে হলে লেখার উপস্থাপনা অবশ্যই ভালো হতে হবে। মনে রাখতে হবে যার খাতার উপস্থাপনা যত সুন্দর নম্বর পাবার ক্ষেত্রে সে তত বেশি গ্রহণযোগ্য। প্রচুর হাতের লেখা চর্চা করতে হবে।
ভাইভা অভিজ্ঞতা : ৪৩তম বিসিএস ছিল আমার জন্য প্রথম রিটেন এবং ভাইভা। কাজেই এর ফলাফলও আমার জন্য বহুল আকাক্সিক্ষত ছিল। ভাইভার কোনো সিলেবাস নেই। স্যারদের যেখান থেকে ইচ্ছা প্রশ্ন করেন। আমার ভাইভা ছিল সর্বশেষ দিনে। অনেকেই বলেন শেষের দিকে ভাইভাগুলোতে স্যারেরা কম নম্বর দেন। এটি মোটেও সত্য নয়। ভাইভা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব, সৎ সাহস, উপস্থিত বুদ্ধি যাচাই হয় এমন প্রশ্নই বেশি করা হয়। ভাইভায় প্রশ্নের উত্তর দেবার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
স্মার্ট পুলিশের সেবা জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে চাই
-ডা. শেরশাহ
বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন : জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার চর ভাটিয়ানি গ্রামে ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করি। ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মোমেনশাহী হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে। ডেন্টিস্ট হয়েও পুলিশ হবার যাত্রা শুরু এখান থেকেই ।
বিসিএসের ধারণা লাভ : মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ই প্রথম বিসিএস সম্পর্কে জানতে পারি। ক্যাম্পাসের দু’জন বড় ভাইয়ের পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান আমাকে বিসিএসের প্রতি আরও উদ্দীপ্ত করে তোলে। পাশে পেয়েছি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকদের পরামর্শ ও বন্ধুদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা।
অনুপ্রেরণা : প্রথমবার বিসিএসেই পুলিশ ক্যাডারে তৃতীয় হওয়াই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন আমার বাবা। তিনি আমার অনুপ্রেরণার জায়গা ছিলেন। আমার স্কুল শিক্ষক বাবার কাছেই আত্মসম্মানবোধ, মানবতা, আধ্যাত্মিকতা, আত্মত্যাগ, নিজের বিপদের সময়ও অন্যকে সাহায্য করা শিখেছি। বাবা তার পেশাদার জীবনের বাইরেও খাজা মোজাম্মেল হক (র.) ফাউন্ডেশন নামক একটি অলাভজনক, অরাজনৈতিক ও মানবকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-প্রধান সমন্বয়কারী। বাবাকে দেখতাম নিজের কোনো স্বার্থ বা অর্থ লাভ ছাড়াই ফাউন্ডেশনের হয়ে দুস্থ ও অভাবী মানুষের জন্য দিন-রাত এক করে কাজ করে গেছেন। ছোটবেলায় বাবার কাজ দেখেই বুঝেছি সমাজের ও দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে।
ডেন্টিস্ট হয়েও কেন পুলিশ ক্যাডার : বিপদের সময় মানুষ সবার আগে ডাক্তার ও পুলিশের কাছেই ছুটে আসে। একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে মানুষের সেবা করার সুযোগ কিছু সময় সীমিত। পুলিশের সেবা করার পরিধি সেই তুলনায় বিশাল। মেডিক্যাল কলেজে পড়াকালীন সময়টাতে মাদকের প্রভাবে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবন শেষ হতে দেখেছি। এছাড়া অনলাইনে বুলিং, যৌন হয়রানি, হ্যাকিংয়ের শিকার অনেক মানুষ বিশেষ করে নারীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। কেউ কেউ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হন না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী হিসেবে স্মার্ট পুলিশিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে চাই।
প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি যেভাবে নিয়েছি : মাত্র তিন মাস সময়ে প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নেওয়া প্রসঙ্গে শেরশাহ জানান, যেসব বিষয়ে পড়া কম কিন্তু প্রতি বছরই প্রশ্ন আসে সেগুলো আগে খুঁজে বের করেছি। নতুন জিনিস না পড়ে ওগুলোই বার বার চর্চা করেছি। বাংলাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ থাকায় ছাত্র অবস্থাতেই বেশকিছু বই পড়ে ফেলি। যেমন মূলধারা ৭১, জোৎস্না ও জননীর গল্প, দাস পার্টির খোঁজে, রাইফেল রুটি আওরাত, ওঙ্কার, দক্ষিণায়নের দিন, আরেক ফালগুন, ১১টি সেক্টর বিজয়ের কাহিনি, বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর, নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার, এনাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স। তবে তিন মাসের প্রস্তুতিতে বইগুলো আগে থেকেই পড়ে ফেলায় খুব উপকারে এসেছে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক বিষয়গুলোতে অনেকে খুব বেশি জোর দেন। সাম্প্রতিক বিষয়গুলোর নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই তাই পড়াও অনেক বেশি। যোগাযোগ প্রযুক্তি এই বিষয়গুলোর পড়া নির্দিষ্ট।