আজ ১৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট হবে না: প্রধানমন্ত্রী


অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, রমজানে কোনো কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না। তবে নিত্যপণ্য মজুদ করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে জড়িতদের যোগসূত্র দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল শুক্রবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো যে হঠাৎ করে করা তা তো না, এটা পরিকল্পিতভাবে। খবর বিডিনিউজের।

প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশে মার্চের দিকে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে তিনি নির্বাচনের আগে মন্তব্য করেছিলেন, সেই শঙ্কা এখনও আছে কি না। আর বাজার কারসাজি কীভাবে মোকাবেলা করা যায়। উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র তো আছে। আপনারা জানেন, আমি আসার পর থেকে বার বার আমাকে বাধা দেওয়া, ক্ষমতায় যেন না যেতে পারি। ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনাই ধরেন না কেন, রাসেলকেও তো ছাড়েনি, কেন, যেন ওই রক্তের কেউ বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম, বেঁচে গেছি, ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার চেষ্টাই হচ্ছে, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতি দেশ স্বাধীন করেছে, সেটাকে পূরণ করা। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে, বারবারৃ আজকে মানুষের ভোটের অধিকার, আমরাই আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি, তার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনটা যাতে না হয়, তার জন্য একটা বিরাট চক্রান্ত ছিল, আপনারা জানেন। আপনারা ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটা একবার চিন্তা করেন। ২০১৩ সালের যে অগ্নিসন্ত্রাস, ২০১৩, ১৪, ১৫, এরপর আবার গতবছর ২৮ অক্টোবর। জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড়ে। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। সেই ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই ধরনের নির্বাচন বানচালের পক্ষে, তারা যখন দেখল যে ইলেকশন কিছুতেই আটকাতে পারবে না, কারণ মানুষের একটা স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, তখন চক্রান্ত হল যে জিনিসের দাম বাড়বে, সরকার জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, তখন আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করব। এটা তাদের পরিকল্পনার অংশ। কাদের সেটা আপনারা ভালো বোঝেন, আমি আর কারো নাম বলতে চাই না, বলার দরকারও নেই আমার। কিন্তু এই চক্রান্তটা আছে। তবে এই কথাটা আমি বলতে পারি, এই যে কালকে বৃষ্টি হল না? কথায় তো আছে, ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজা পুণ্য দেশ’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঘের শেষে কিন্তু বৃষ্টি হল, আবার এই ফাল্গুনের শুরুতেও কিছু বৃষ্টি। আমের মুকুলগুলি আবার তরতাজা হয়ে উঠছে। ক্ষেতে কেবল ধানের চারা রোপণ, সেখানেও সেচের আর প্রয়োজন হবে না এই বৃষ্টি যদি ভালোভাবে হয়। মাটির ময়েশ্চার বাড়বে, ফসল ভালো হবে। ফুলের হয়ত একটু ক্ষতি হবে, কিন্তু খাদ্যপণ্য উৎপাদনের কোনো অসুবিধা হবে না।

সেই মহামারীর সময় থেকে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে। এবং সেটা শুধু বলা না, কার্যকরও করেছি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় তো বাংলাদেশে অভাব হলে বলত পেটে ভাত নাই। এখন কি সেই কথাটা বলে? বলে না? কী বলে? ডিমের দাম, পিঁয়াজের দাম, মুরগির দাম, গরুর মাংসের দাম, অথবা পাঙাশ মাছের পেটি খেতে পারছে না, এই তো? এটা কি একটা পরিবর্তন না? ১৫ বছরে তো এই পরিবর্তনটা এসেছে, সেটাতো স্বীকার করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ বছর আগে কী ছিল? ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত, ভাতের ফ্যান চাইত, এখন তো ভিক্ষা চায় না। প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনি নিজেই তো বললেন, ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানো। আপনার কি এটা মনে হয় না, এই যে যারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন করে, এখানে তাদেরও কিছু কারসাজি আছে? এর আগে এরকম পিঁয়াজের খুব অভাব, দেখা গেল বস্তাকে বস্তা পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলিরে কি করা উচিত? সেটা আপনারাই বলেন। এদের গণধোলাই দেওয়া উচিত। কারণ আমরা সরকার কিছু করতে গেলে বলে সরকার করছে, তার থেকে পাবলিক যদি এটার প্রতিকার করে তাহলে আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।

বাজার নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ : রোজার সময় বাজার নিয়ন্ত্রণের যে চ্যালেঞ্জ, সংবাদ সম্মেলনে সে প্রসঙ্গও আসে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে কিন্তু কোনো জিনিসের অভাব হবে না। ইতোমধ্যে সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করা আছে। এটা নিয়ে অনেকে কথা বলবে, কিন্তু কোনো অসুবিধা হবে না। রমজান তো কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য, রমজানে একটু কম খায়। আমাদের দেশে রমজানে খাবার দাবারের চাহিদা একটু বেড়ে যায়। সাধারণত রমজানে যে বিষয়গুলো, যেমন ছোলা, খেজুর, চিনি, এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা। এগুলো পর্যাপ্ত আনার ব্যবস্থা আছে, এগুলো নিয়ে সমস্যা হবে না। সেই ব্যবস্থা অনেক আগেই করে রেখেছি। সংরক্ষণের ব্যবস্থা অনেক সময় ‘শাখের করাতের মত’ পরিস্থিতি তৈরি করে বলেও সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি একটা এলাকার কথা বলি, যেমন পাবনায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, মাচা করে করে বাতাস দিয়ে রাখা হয়। আপনি জানেন, কৃষকরা কত চালাক, তারা কিন্তু ওই বাজারের দাম দেখে তারপরে ছাড়ে। মোবাইল ফোন সবার হাতে আছে, দামটা তারা ঠিকই খবর পেয়ে যায়, কোথায় কি দাম। দাম যদি না পায়, বাজারে ছাড়ে না। এটা অনেকটা শাখের করাতের মতো। আপনি উৎপাদন করবেন, কৃষক উৎপাদন করবে, উৎপাদিত পণ্যটা সে বাজারজাত করবে, আপনি যদি এখন বেশি দাম কমাতে যান, কৃষক তার মূল্য পাবে না। আবার দাম বাড়লে যারা নির্দিষ্ট আয়ে চলতে হয়, তাদের জন্য কষ্ট। প্রত্যেক বিভাগে আলাদা আলাদা পণ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গ ও অন্যান্য : মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ভ্লাদিমির জেলেনস্কিকে তিনি যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পেলেও একইভাবে কথা বলবেন। তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জিজ্ঞেস করি যে, যুদ্ধটা কীভাবে বন্ধ করা যায় সেটা আমাকে বলেন। আমার সোজা প্রশ্ন ছিল, যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ করা যায়, এটাতেতো সবাই কষ্ট পাচ্ছে; মহিলা, শিশু, যুব সমাজ কত জীবন দিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা হলেও সেই একই কথাই আমি বলব যে, আমি যুদ্ধ চাই না, আপনি যুদ্ধ বন্ধ করেন। আমি আমার কথা বলে যাব, তারপর কেউ বুঝলে বুঝুক, আমার কিছু আসে যায় না।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের পর জেলেনস্কির কী উত্তর ছিল, এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, উনি অনেক ব্যাখ্যা দিলেন, কী কী হয়েছে, অনেক কিছু।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে যান শেখ হাসিনা, ফেরেন ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয় এই সফরে।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটি ফ্রেডরিকসেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। এই সফরে বিভিন্ন আলোচনায় শেখ হাসিনা রাশিয়া–ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধ এবং গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানান।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং জার্মান ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী সভেনজা শুলজেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে স্পষ্ট ভাষায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি যেটা বলেছি, সেটা স্পষ্ট। আমি বলেছি, আমি যুদ্ধ চাই না। কারণ, যুদ্ধকালীন যে কষ্ট আমরাতো তার ভুক্তভোগী। আমি নিজেইতো ভুক্তভোগী। কাজেই আমার দেশের মানুষ যেভাবে গণহত্যার শিকার হয়েছে, সেগুলিতো আমরা জানি। কাজেই যেখানে যুদ্ধ হয়, আমি বলি যুদ্ধ আমরা চাই না, আমরা শান্তি চাই। ওখানেও যেটা বলেছি, আজকে গাজায় যেটা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের উপর যেটা হচ্ছে, এটাতো অমানবিক কাজ। হাসপাতালগুলির উপর আক্রমণ, হাসপাতালে যেয়ে সেখানে মানুষকে মারা, বাচ্চাদের কি দুরবস্থা! এটা কি মানবতাবিরোধী না? এটাতো মানবতাবিরোধী।

ক্ষমতাশালী দেশগুলোর দ্বিমুখী নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখি যে, বিশ্ব মোড়লরা দুমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। এক জায়গায় ফিলিস্তিনের সমস্ত জমি দখল করে ফেলছে, ওটা ইনভেশন না, আর ইউক্রেনেরটা ইনভেশন। তো, দুমুখো নীতি কেন হবে, সেটা আমার প্রশ্ন ছিল। অন্যদের দ্বিমুখী নীতির বিপরীতে নিজের স্পষ্ট অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি জানি, অনেকে স্পষ্ট করে বলবে না সাহস করে। নানা জনের নানা দুর্বলতা থাকে, আমারতো কোনো দুর্বলতা নাই। আমারতো চাওয়া পাওয়া নাই, আমার কাছে ক্ষমতাটা হল, ‘থাকে লক্ষ্মী, যায় বালাই’ বলে একটা কথা আছে না… আমার কাছে সেটাই। থাকলে ভালো, আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নাই। আমার একটা লক্ষ্য ছিল ২০২১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হবে, বাংলাদেশকে একটা ধাপ তুলতে হবে, আমি সেটা করে দিয়েছি। আর এখন আমি ক্ষমতা আসব কি আসব না, আমিতো পরনির্ভরশীল হয়ে করি নাই। আমার একমাত্র নির্ভরতা হচ্ছে, আমার দেশের জনগণ।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবসময় চেয়েছি, জনগণের সমর্থন, জনগণের সহযোগিতা পেয়ে.. হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হবেই আমার দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হবে, এখনতো বিশ্বটা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ তার প্রেক্ষাপটে নিষেধাজ্ঞা এবং গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে এখন মুদ্রাস্ফীতির যন্ত্রণা পাচ্ছে, সেটা ইউরোপ–আমেরিকা সব জায়গায়, কোনো জায়গায় নাই তা না, প্রত্যেক জায়গায়। যন্ত্রণা সবাই ভোগ করছে। কষ্টতা সব দেশের সাধারণ মানুষের হচ্ছে। কোভিড–১৯ এর পরে যখন অর্থনীতিটা একটু উঠে আসছিল, কিন্তু ইউক্রেন এবং গাজায় যুদ্ধ মিলিয়ে সারা বিশ্ব আজকে কষ্ট পাচ্ছে। যুদ্ধের প্রভাব ও ক্ষতিকর দিকটা একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকটের সময় মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধে না যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, ওদের সাথে যুদ্ধে যাইনি, মিয়ানমারের সাথে ঝগড়াও করতে যাইনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করছি এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি যে, তারা ফেরত নিক। এখনও যে অবস্থাটা বিরাজ করতেছে, আমি আমার সহকর্মীদের বলেছি, ধৈর্য ধরে আমরা লক্ষ্য রাখব, কোনো কিছুতে আমাদের উত্তেজিত হলে চলবে না, শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এবং সেটা করে আমরা কিন্তু সুফল পাচ্ছি।

দক্ষিণ এশিয়া বা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ এখনও সুস্থ অবস্থায় বিরাজ করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্য দেশগুলো সবাই কষ্ট পাচ্ছে। এটাই হল বাস্তবতা। এজন্য বলি, যত পারেন ফসল উৎপাদন করেন, নিজের ভাত নিজে খাব, নিজের মাছ নিজে খাব, নিজের ঘরে নিজে থাকব, কারও কাছে আর হাত পেতে চলতে হবে না। এটাই আমার কথা।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ফেরাতে না পারার মধ্যে মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি শান্তভাবে মোকাবেলা করার কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। আসলে মিয়ানমারের অবস্থাই এত খারাপ, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যখন কথা বলি, সকলে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়, কিন্তু আসলে ফিরিয়ে নেওয়া বা ফিরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ভালো একটা কার্যকর কিছু হচ্ছে না। আর যুদ্ধ বন্ধের কথা যাদেরকে বলি, তারা সমর্থন করে, কিন্তু উদ্যোগটা নেবে কে? এটাও একটা প্রশ্ন। যারা বিশ্ব মোড়ল, তারাই যদি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে আর বিড়ালের গলায় ঘণ্টি বাঁধবে কে? কিন্তু এখানে সেটাই হল সমস্যা, কে বন্ধ করবে? কারণ, তারা নিজেরই হোতা।

বিশ্ব রাজনীতিতে মধ্যমপন্থী দেশগুলো নিয়ে কোনো মোর্চা গড়ে তোলার পরিকল্পনার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, আমি এই কথাটাই বলি। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্ম বা এ ধরনের কিছু করবার মত, সেই দক্ষতা আমার নাই, যোগ্যতাও আমার নাই, চিন্তাও আমার নাই। এটাই হলো বাস্তবতা। আমি মনে করি, আসলে অনেক প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে, আসলে কাজের সময় কাজে লাগে না। সেটাই হল বাস্তব। গাজায় নারী–শিশুদের হত্যা এবং হাসপাতালে হামলার মধ্যে যুদ্ধের বন্ধের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ভিটো দেওয়ার প্রসঙ্গও টানেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধ চলার সময় আমরা এটা দেখেছি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর