মো. শোয়াইব, হাটহাজারীঃ উত্তর চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা নেই অক্সিজেন-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে। বিশেষ করে হাটহাজারী জিরো পয়েন্টে অসহনীয় যানজটের কবলে পড়ছেন যাত্রীরা। চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারাও জানেন অক্সিজেন এলাকার যানজটের কথা। এই মহাসড়কে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারীদেরকেও।
সরজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে উত্তর চট্টগ্রামের দূরপাল্লার অধিকাংশ গণপরিবহন অক্সিজেন মোড় থেকে ছেড়ে যায়। কিন্তু অক্সিজেনে নেই কোনো টার্মিনাল। সড়কের একটা বড় অংশ দখলে নিয়ে এখান থেকে গাড়ি গন্তব্যের দিকে ছোটে। এ কারণে অক্সিজেন মোড়ে প্রায়শই যানজট লেগে থাকে। অক্সিজেন থেকে কোনো গাড়ি যখন হাটহাজারী রোডের দিকে অগ্রসর হয় তখন চার লাইনের সুবিধার কারণে সেটি নির্বিগ্নে চলে। তবে হাটহাজারী পর্যন্ত পৌঁছুতে যে কোনো পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাজার এলাকা পেরোতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে আমানবাজার-ক্যান্টনমেন্ট, বড়দীঘির পাড়, চৌধুরী হাট, মদন হাট, এলাকাগুলো। এসব স্থানের সড়কে অবৈধ পার্কিং ও অপরিকল্পিত বাজার থাকায় পরিবহনগুলোকে পড়তে হয় যানজটের কবলে। হাটহাজারী জিরো পয়েন্টে বর্তমানে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে। এখানে ১শ’ গজের মধ্যে রয়েছে দু’টি কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) পূরণের ফিলিং স্টেশন। এগুলো থেকে প্রতিদিন শত শত সিএনজি চালিত গাড়ি গ্যাস সংগ্রহ করে। তাই সড়কের দু’পাশে থাকে গাড়িগুলোর দীর্ঘ সারি। যদিও আইনে রয়েছে ১ কিলোমিটারের মধ্যে ১টির বেশি ফিলিং স্টেশন থাকতে পারে না, কিন্তু এখানে সেটি রয়েছে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড (আরপিজিসিএল) বলছে, জোনিং প্রিন্সিপাল ২০০৯ অনুসারে এই আইনটি চালু রয়েছে। তবে এর আগে যেগুলো অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরপিজিসিএল’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘যে আইনটি বর্তমানে বলবৎ রয়েছে সেটিতে বেশ কিছু বিষয় সংযুক্ত রয়েছে। এরমধ্যে কনজ্যুমারের আধিক্যতার বিষয়টি এসেছে। যেসব স্থানে অধিক চাহিদা রয়েছে সেসব জায়গায় একাধিক ফিলিং স্টেশনের অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার আছে। তবে নাগরিক অসুবিধার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেয়া হবে। যদি প্রশাসনের কাছ থেকে অভিযোগ আসে সেক্ষেত্রে স্থাপনা গুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন সড়কে অবৈধ গাড়ী পার্কিং ও নির্মাণ সামগ্রী দেখলেই শাস্তি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটিসহ রাউজান ফটিকছড়ি মহাসড়কে প্রতিদিন সহস্রাধিক যানবাহন যাতায়াত করে। এই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর উভয়পাশের ফুটপাত (সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা) অবৈধ প্রক্রিয়ায় হকারদের দখলে রয়েছে। এসব হকাররা প্রতিদিন প্রভাবশালীদের চাঁদা দিয়ে থাকে। এছাড়া অবৈধ পার্কিংয়ের কারণেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এই মহাসড়কে। যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এজন্য জনবল সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন তারা। উপজেলা প্রশাসনসহ ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন অভিযানেও সুরাহা মিলছে না জিরো পয়েন্ট, ত্রিবেণী মোড়, কলেজ মোড়ের যানজট। হাটহাজারীর স্থানীয়রা বলছেন, জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সিদ্দিক মার্কেট, আলিফ হসপিটাল, আল হাশেমী হোটেলসহ কয়েকটি স্থানে যানবাহন অবৈধ পার্কিং করায় যানজট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে হাটহাজারীতে ট্রাফিক বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন সাতজন। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে আইন অবমাননার বিপরীতে আইন প্রয়োগ কম হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের।
হাটহাজারী ট্রাফিক ইনস্পেক্টর (টিআই) বখতিয়ার উদ্দিন শামীম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের জনবল কম হওয়ার পরেও আমরা যানজট নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পার্শ^বর্তী উপজেলাগুলোতে গ্যাস পাম্প না থাকায় এখানে দুর্ভোগ বেড়েছে। এছাড়া দূরপাল্লার অবৈধ যানবাহন, নো-পার্কিংসহ নানা অভিযোগে প্রতিদিন মামলা দেয়া হচ্ছে। অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে ট্রাফিক পুলিশের কেউ জড়িত নয়। আমরা শতভাগ চেষ্টা করি হাটহাজারী সদর এলাকাকে যানজট মুক্ত রাখতে। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
এদিকে হাটহাজারী পেরিয়ে রাঙ্গামাটি কিংবা খাগড়াছড়ির মহাসড়কটিতেও একই চিত্র দেখা গেছে। মহাসড়কটি চার লেইনে উন্নীত হলেও যানজট ছাড়া যাতায়াতের সুফল মিলছে না কেবল অপিরকল্পিত বাজার এবং অবৈধ দখলের কারণে।