আলহাজ্ব মাওঃ ক্বারী নুরুল কবিরঃ
অনেক দিন আগের কথা আরব মরু প্রান্তের একটি আলোচিত ঘটনা। আবুল কাশেশ কুশাইরী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মরুভূমির মাঝে আমি জনৈকা নারীকে একাকী দেখলাম। বললাম, কে আপনি? উত্তরে বললেন, 'আর বলুন সালাম, অতঃপর শীঘ্রই জানতে পারবেন। এ আয়াত পাঠ থেকে বুঝতে পারলাম যে, তিনি বলছেন, প্রথমে সালাম দিন। অতঃপর প্রশ্ন করেন। কেননা সালাম হলো ভদ্রতা এবং আগন্তুকের পক্ষ থেকে যার সান্নিধ্যে আসা হয় তাঁর প্রতি কর্তব্য স্বরূপ। তখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এই মরু প্রান্তরে তাও আবার নিঃসঙ্গ একাকী কী করছেন? উত্তরে তিনি বললেন, 'আল্লাহ যাকে পথ দেখান তার কোনো পথভ্রষ্টকারী নেই।' এ আয়াত থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করছেন। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম। 'আপনি জ্বিন না কি মানুষ?' তিনি উত্তর দিলেন : 'হে আদম সন্তানরা। ‘প্রত্যেক নামাযের সময় তোমাদের উত্তম পোশাক পরিধান করো।’ এ আয়াত শুনে বুঝতে পালাম যে, তিনি একজন মানুষ। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কোথা থেকে এসেছেন?' উত্তরে তিনি বললেন, ‘তাদেরকে দূরবর্তী স্থান থেকে ডাক দেয়া হবে।’ এ আয়াত থেকে বুঝতে পারলাম যে, তিনি বহুদূর থেকে এসেছেন। আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় চলছেন?' উত্তরে বললেন, ‘সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর (কাবা) ঘরের হজ্ব করা ফরয।’ বুঝতে পারলাম যে, ‘তিনি হজ্বের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।' আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কয়দিন হলো রওনা হয়েছেন?' উত্তর দিলেন নিশ্চয় আমি আকাশসমূহ এবং পৃথিবীকে আর যা কিছু এতদুভয়ের মাঝে বিদ্যমান সে সব কিছুকেই ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি। আমি বুঝতে পারলাম যে, ছয় দিন আগে তিনি তার শহর থেকে রওয়ানা হয়েছেন এবং মক্কা অভিমুখে চলছেন। বললাম: কিছু খেয়েছেন? উত্তরে বললেন : 'আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতীত কোনো দায়িত্ব চাপান না।' বুঝতে পারলাম যে, চলার ব্যাপারে এবং দ্রæত গমনের ক্ষেত্রে আমার মতো তাঁর সাধ্য নেই। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমার বাহনে আরোহণ করে বসেন। আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবো। উত্তরে বললেন: 'যদি ঐ দুয়ের (আসমান ও জমিন) মধ্যে আল্লাহ ভিন্ন আর কোনো উপাস্য থাকতো তাহলে উভয়ই ধ্বংশ হয়ে যেত।' আমি বুঝতে পারলাম যে, একটি বাহন বা ঘরে বা স্থানে পুরুষ ও নারীর শরীরের স্পর্শ ধ্বংসের কারণ হয়। কাজেই আমি বাহন থেকে নেমে পড়লাম এবং তাঁকে বললাম, 'আপনি একাকী বাহনে চড়ে বসেন।' যখন বাহনে আরোহণ করলেন তখন বললেন : 'পবিত্র মহান আল্লাহ যিনি একে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথায় একে বশীভূত করার ক্ষমতা কারো ছিলো না। যখন আমরা কাফেলায় পৌঁছে গেলাম তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'এই কাফেলায় কি কেউ আপনার পরিচিত রয়েছে? উত্তর দিলেন মুহাম্মদ একজন প্রেরিত পুরুষ বৈ অন্য কেউ নন। তাঁর পূর্বেও অনেক প্রেরিত পুরুষ গত হয়েছেন।' হে ইয়াহিয়া! কিতাবকে শক্তভাবে ধারণ করো।' 'হে মুসা! নিশ্চয় আমিই আল্লাহ।' আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছি। এ আয়াতসমূহ থেকে বুঝতে পারলাম যে, মুহাম্মদ, ইয়াাহিয়া, মূসা ও দাউদ নামে তার চারজন পরিচিত লোক কাফেলায় রয়েছেন। যখন ঐ চারজন নিকটে এলেন তখন তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন: ‘মাল-সম্পদ এবং সন্তান-সন্তুতি হলো পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।' আমি বুঝতে পারলাম যে, এরা তাঁর পুত্র।প্র তাদেরকে বললো: 'হে বাবা। তাকে মজদুর নিযুক্ত করো, কারণ তোমার মজদুর হিসাবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি যে শক্তিশালী এবং বিশ^স্ত। এ আয়াত থেকে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি তাঁর পুত্রদেরকে বলছেন এই পরিশ্রমী ও বিশ্বস্ত লোককে পারিশ্রমিক প্রদান করো। যখন তাঁর পুত্ররা আমাকে কিছু দিনার দিরহাম প্রদান করলো তখন তিনি অনুভব করলেন এগুলো কম হয়ে গেছে। এ কারণে বললেন : 'আল্লাহ যাকে চান (ত) কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন।' অর্থাৎ তার পারিশ্রমিক আরো বেশি দাও।' আমি এ নারীর অবস্থা দেখে অতীব বিস্মিত হলাম। তাঁর পুত্রদেরকে বললাম, ‘এ পুণ্যবতী মহিলা যার দৃষ্টান্ত ইতিপূর্বে আমি কখনো দেখিনি, তিনি কে? তারা উত্তর দিলো: ‘এ মহিলা হলেন হযরত ফিজ্জাহ। হযরত ফাতেমা যাহরা (রাঃ) এর দাসী। বিশ বছর ধরে তিনি কুরআন ছাড়া কথা বলেন না।' হ্যাঁ, কুরআন হলো সর্বোত্তম বাণী, কাহিনী এবং বিধান। যে ব্যক্তি তার জীবনের সকল পর্যায়ে এবং চাল-চলনে কুরআনকে আঁকড়ে ধরে এবং তা থেকে জ্যোতি আহরণ করে সে কল্যাণের বাহনে আরোহণ করে এবং সুপথে পরিচালিত হয়।
লেখক পরিচিতি
শিক্ষক
ও
খতিব
পূর্ব কাটগড় আলিফ জামে মসজিদ
চট্টগ্রাম।