আব্দুল কৈয়ূম চৌধুরীঃ আওয়ামী লীগের দূরদর্শী রাজনীতির সফল শুরুটা হয়েছিলো ১৯৬৪ সাল থেকে। আজকের আ. লীগের আতুঁড় ঘরের ধাই হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিব এই দেশের নিপীড়িত মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে যে লড়াই সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো তা কী এখনও থেমেছে? বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাম তো দূরে থাক, মেধা-ঘামের প্রতিদানও কী দিতে পেরেছে বাঙালি? স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চার বছর না গড়াতেই ক্ষমতা ও আধিপত্যের লোভে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিলো তাকে। খুনীর দল বঙ্গবন্ধুকে থামালেও দমে যায়নি আ. লীগ, নিশ্চিহ্ন হয়নি এ দল। শুধু কোমর সোজা করে উঠে দাঁড়াতে সময় লেগেছিলো ২৬ বছর।
আজ থেকে ৫৯ বছর আগে যে দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ১৯৬৪ সালে গড়ে উঠেছিলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা প্রণয়নের মাধ্যমে সেই দলের সভাপতি হয়ে নেতৃত্বের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিণত হলেন বাঙালি জাতির পিতা। ১৯৪৯ সালে যখন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়েছিলো তখন বঙ্গবন্ধু ছিলেন কারগারে রুদ্ধ।
সাম্প্রদায়িকতা ধারণ করে বিভিন্ন ধর্মালম্বী একটি দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা যায় না। এজন্য দূরদর্শী রাজনীতিবিদ শেখ মুজিব গড়েছিলেন আ. লীগ। এই শুরুটা করতে যেমন ২০ বছর লেগেছিলো তেমনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনার সময় লেগেছে ২৬ বছর। ‘৯৬ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিচালনার ক্ষমতা পেয়ে আবারও দেশ উন্নয়নের দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আ. লীগ। তৎকালে গৃহীত প্রকল্প বা উদ্যোগ গুলো দেশবাসীর কাছে প্রশংসার দাবিদার করে তুলে আ. লীগকে। কিন্তু গণতান্ত্রিক এই দেশে সময় স্বল্পতার কারণে তখনও সবগুলো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর রাষ্ট্রের ক্ষমতা চলে যায় আবারও স্বৈরশাসকের দখলে। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আ. লীগ যে দূরদর্শীতা দেখিয়েছিল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তারচেয়ে অনেক বেশি দূরদর্শিতা দেখাতে হয়েছে ‘৯৬ সালে। তার ফলস্বরূপ ২০০৮ সাল থেকে একটানা তিন তিনবার নির্বাচিত হয়েছে আ. লীগ।
আরও পড়ুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে চট্টগ্রাম
২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের অগ্রগতিতে এগিয়ে গেছে দেশ। এসময় আ. লীগ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করেছে। ২০১৮ সালে আ. লীগের গৃহীত এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য দূরদর্শী পাথেয়। এটি একটি ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার উপর গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দূরদর্শী রাজনীতিবিদ নন, তিনি এখন আ. লীগের নৌকার মাঝি। উন্নয়নের কৌশলকে তিনি অবিভাজ্য নীতিতে বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে সামাজিক উন্নয়নের পরিধিতে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। বিশ্বের কাছে শেখ হাসিনার প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন মডেল ‘শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল’ হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ভেবেছেন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া অর্থনীতির সুফল জনগণের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার সুশাসন এই ধ্রুপদী তত্ত্বটিকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে একটি প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তার সফল নেতৃত্বের কারনে গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামের অবকাঠামো খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও অভীষ্ট লক্ষ্যে অবিচল থেকে সব চ্যালেঞ্জ এবং ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিচ্ছেন। এটি সম্ভব হয়েছে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা আর কূটনৈতিক দক্ষতার কারণে। এজন্য মার্কিন প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বসের চোখে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ১শ’ নারীর তালিকায় ২৬তম স্থানে রয়েছেন তিনি। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ১শ’ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ডেইলি লিডারশিপ পত্রিকায় বিশ্বের সেরা পাঁচ নীতিবান নেতার একজন বলা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই কাণ্ডারীকে। বর্তমান বিশ্বে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবেও গণ্য করা হয় তাকে। বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে। আজ চট্টগ্রামে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। এই মাহেন্দ্রক্ষণে চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও আগামি নির্বাচনে আবারও আ. লীগ নির্বাচিত হওয়ার শুভকামনা রইল।
লেখক: কার্যকরী সদস্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ