আজ ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে ‘বাজার’


অনলাইন ডেস্কঃ কবি শামসুর রাহমানের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থে উদ্ভট উটের পিঠে ‘স্বদেশ’ চলছিলো। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের প্রায় ৪২ বছর পেরিয়েও সেই উটের পিঠ থেকে আমাদের স্বদেশকে নামানো সম্ভব হয়নি। যার প্রমাণ মিলছে সাম্প্রতিক বাজার ব্যবস্থাপনায়। গত এক দশকে আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি নেই জনগণের। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজারে জ্বলছে তুষের আগুন; যা ক্ষণে ক্ষণে হচ্ছে তীব্র। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে শামসুর রাহমানের উদ্ভট উটটি হলো বাজার সিন্ডিকেট, যা ভাঙতে পুরোপুরি ব্যর্থ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ঘোষিত ইশতেহারে বর্তমান রাষ্ট্রক্ষমতাসীন সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিলো মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ। রমজান মাস আসার অনেক আগে থেকে বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলে আসছিলেন অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু কোনো কিছুই যেন ধোপে টিকেনি বরং উল্টো চিত্র দেখছে দেশবাসী। বাজারে রোজার সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম, নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। বাজার থেকে মলিন মুখে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। ছোলা, খেঁজুর, খেসারির ডাল, বেসন, সয়াবিন, চিনি কোনোটির দামে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। দামের উত্তাপে ঘাম ঝরছে সবার।

আরও পড়ুন রোজার আগেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী

বাজার নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করছে। কেবল রোজার সামগ্রী নয়; সবজি, আমিষ, মসলার বাজারেও জ¦লছে তুষের অনল। দু’একটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি। ইফতার আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ বেগুন, শসা, লেবু ও কাঁচামরিচের দাম শুনে ভিরমি খাচ্ছেন অনেকে। আবার অনেক ক্রেতা ভবিষ্যতে এসব পণ্যের দাম আরো বাড়তে পারে এ আশঙ্কায় বেশি পরিমাণে (মাসকাবারি বাজার) কিনে মজুদ করছেন। কোনো কোনো বাজার বিশ্লেষকের মতে, বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কিন্তু অর্থনীতির পরিভাষার সাথে এই বিশ্লেষণের সামঞ্জস্য নেই। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, পাইকারি মোকামে পর্যাপ্ত মজুদও রয়েছে, তবে খুচরা ক্রেতাদের অধিক ক্রয়ের কারনে বাজারে কেন প্রভাব পড়বে?

নগরীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে লাফিয়ে বেড়েছে বেগুন, শসা ও লেবুর দাম। কাঁচামরিচের দামও প্রতিদিন বাড়ছে। খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি বেগুন সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। কয়েকদিন আগেও পণ্যটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভোক্তাদের দুঃশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে লেবুর দাম। বাজারে ভালো মানের প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ফলে একটি লেবু কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। এ ছাড়া শতক ছাড়িয়েছে শসা। মান বিবেচনায় পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে খিরা। কাঁচামরিচ বাজারভেদে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। এরমধ্যে নতুন করে বেড়েছে আলুর দামও। বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০ টাকায়। অপরদিকে চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও চিড়ার দামও বাড়তি। মাছ-মাংসের বাজারেও একই চিত্র। বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ টাকায়, মশুর ডাল কেজি ১৪০ টাকা, চিড়া প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা ও খেজুর মানভেদে ২৯০ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল ৫৫ টাকা, আতপ চাল মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ এবং রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘বাজার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এসব সিন্ডিকেট সরকারকেও জিম্মি করে ফেলেছে। রমজান মাসে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হওয়ার পরও দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।’

এদিকে রমজান উপলক্ষ্যে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনসহ একাধিক সংস্থা। সম্প্রতি খাতুনগঞ্জে অসাধু এলাচ ও চিনি ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।

তিনি জানিয়েছেন, ‘কয়েকদিন আগে এস আলম সুগার মিলে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার পর খুচরা বাজারে চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে, তবে পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। রমজানে যেন চিনির পাইকারি ও খুচরা বাজার দুটোই স্থিতিশীল থাকে সে উদ্দেশ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। চিনি বিক্রয়কারী দুটি প্রতিষ্ঠান আরএম এন্টারপ্রাইজ এবং নাবিল গ্রুপ কারো কাছেই কোনো ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষিত ছিলো না। ফলে তারা কত টাকায় কিনছেন বা বিক্রি করছেন তা আমরা জানতে পারছি না। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এ সুযোগে বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে ফেলছে। এজন্য সতর্কতামূলক দুটি প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমে ৩০ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এবি ট্রেডার্সের এলসি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে তাদের প্রতি কেজি এলাচ আমদানি করতে ট্যাক্স ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচসহ প্রায় ১ হাজার ৪৫০ টাকা পড়েছে। কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ লাভ করলে দাম ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। তবে ঐ প্রতিষ্ঠানে এলাচ বিক্রি হচ্ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং তিনি জনসমক্ষে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে শ্রেণি অনুযায়ী ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকার বেশি দামে তিনি এলাচ বিক্রি করবেন না।’

তথ্যসূত্র: সংগৃহীত


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর