আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডিসেম্বরেই নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন


প্রভাস চক্রবর্ত্তী, বোয়ালখালী

বোয়ালখালীবাসী ও প্রয়াত দুই সাংসদ মঈন উদ্দিন খাঁন বাদল,এবং মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নুতন কালুঘাট সেতু স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেতুনির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তুত স্হাপন এ বৎসর ডিসেম্বরে হতে পারে,বলে জানিয়েছেন রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির।

গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর সিআরবিতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত শুদ্ধাচার কৌশল বিষয়ক অংশীজন সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ডিসেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে কালুরঘাট সেতু নির্মাণে কোরিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। জুলাইয়ে এই প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের কাজ শুরু হবে এবং দরপত্র প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হয়ে আগামী ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইআরডির সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ুন চুক্তি দুটিতে সই করেন। ‘বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অ্যাক্রোস দ্য রিভার কর্ণফুলী অ্যাট কালুরঘাট পয়েন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে ইডিসিএফ তহবিল থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং ইডিপিএফ তহবিল থেকে ৯ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ।

সিআরবিতে অংশীজন সভায় নতুন কালুরঘাট সেতু ছাড়াও চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল প্রসঙ্গেও কথা বলেন রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, কক্সবাজার রেলপথটি দ্রুত দেশের অন্যতম লাভজনক রুটে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে এখন একটি স্পেশাল ট্রেন চলছে। এটি বন্ধ হবে না। এই রুটে আরো ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাটে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেলওয়ে সেতুটির বয়স ৯৪ বছর চলছে। ২০০১ সালে চুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল জরাজীর্ণ এই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপর ২০০৪ সালে সেটি মেরামত করে এর উপরে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১১ সালে আবারও সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সেতুটি বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে নতুন করে সংস্কার করা হচ্ছে। সেতুটি মেরামতে বুয়েটকে ৮ কোটি টাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানে সেতুটির মেরামত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মেরামতের প্রথম ধাপ হিসেবে গত ডিসেম্বরে কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। পুরোদমে মেরামত কাজ শেষ হলে এই সেতু দিয়ে যানবাহনও চলবে বলে জানান রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। নতুন সেতু নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত পুরনো সেতু দিয়ে কক্সবাজার রুটের ট্রেন এবং উভয় পাড়ে যানবাহন চলবে।

রেল সচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলে পুরনো কালুরঘাট সেতুর ৭০ মিটার উজানে নতুন সেতুটি নির্মাণ করা হবে। ১২ দশমিক ২ মিটার উচ্চতার মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার। প্রস্থ হবে ৭০ ফুট। এর মধ্যে ৫০ ফুটে হবে ডাবল গেজ ও মিটারগেজ ডাবল ট্র্যাক। ২০ ফুটের মধ্যে দুই লেনের সড়কপথ তৈরি করা হবে।

এর আগে গত শুক্রবার সকালে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে চট্টগ্রাম আসেন রেল সচিব। ওইদিন রাতে রেলওয়ের রেস্টহাউসে চট্টগ্রামে কর্মরত রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গতকাল সকালে সিআরবিতে তথ্য অধিকার আইন নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য দেওয়ার পর দুপুরে অংশীজন সভায় অংশ নেন। বিকালে তিনি ঢাকায় ফিরে যান।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় সিওপিএস শহীদুল ইসলাম, সিসিএম মাহাবুবর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সারওয়ার কামালসহ রেলওয়ের অংশীজন প্রতিনিধিরা অংশ নেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর