ইসমাইল হোসেন, বান্দরবানঃ জেলার লামা উপজেলায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা। বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাত ৩টায় লামা উপজেলার আজিজনগর-গজালিয়া সড়কের আজিজনগর কারিতাস মোড়ে ডাক্তার শফির দোকানের সামনে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা আনন্দ টিভির বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার লামা আলীকদম প্রতিনিধি মো: ইসমাইল হোসেন ও চট্টবাণীর বিশেষ প্রতিনিধি মো: আরিফুল ইসলাম ইতোমধ্যে লামা থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে আজিজনগর গাছ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মো. নুরুল ইসলাম সাংবাদিক মোহাম্মদ ইসমাইলকে ফোন করে গাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাথে মিটিংয়ে বসার আমন্ত্রণ জানায় এবং লোভনীয় অফার দেয়। তিনি তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে মিটিংয়ে না বসার কথা ছাফ জানিয়ে দেন। ওইদিন রাত ১১টার দিকে তিনি খবর পেয়েছিলেন, পাচারের উদ্দেশ্যে ১২টি কাঠ বোঝায় গাড়ি আজিজনগর ডলুছড়ি বন রেঞ্জ সংলগ্ন সড়কে একপাশে অবস্থান করছে। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ তিনি লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও আজিজনগর ডলুছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট এসব কর্মকর্তা সাংবাদিক ইসমাইলকে বলেন, ‘আমরা তৎপড় আছি এবং আপনাদেরও সহযোগিতা চাই।’ তখন সাংবাদিক ইসমাইল ও মো. আরিফুল ইসলাম রাত প্রায় ৩ টার দিকে গজালিয়া সড়কের কারিতাস মোড়ের ডাক্তার শফির দোকানের সামনে পৌঁছে অবৈধ কাঠ পাচারের ফুটেজ সংগ্রহ করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় একটি জীপগাড়ি দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর তিনটি মোটর সাইকেলে মোট ৬ জন ও জীপ গাড়ি থেকে ২জন মোট ৮ জন আসামী লাঠি-সোটা নিয়ে এসে অতর্কিতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই হামলাকারীরা কিল, ঘুষি, লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় এবং সাংবাদিকদের মোবাইল ও পকেটে থাকা টাকা লুটে করে নেয়।
আরও পড়ুন সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় সম্পাদক পরিষদের নিন্দা ও উদ্বেগ
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করেছেন আজিজনগর পুলিশ ক্যাম্প (ইনচার্জ) সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) নাছির উদ্দীন। পরে আহত সাংবাদিকদের পার্শ্ববর্তী লোহাগাড়া পদুয়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বুধবার দুপুরে আহত সাংবাদিকরা লামা থানায় উপস্থিত হয়ে হামলাকারী ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। মামলার বাদী মো. ইসমাইল হোসেন লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের হিমছড়ি পাড়ার মৃত আমির হোসেনের ছেলে।
এ প্রসঙ্গে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম শেখ বলেন, ‘আহত সাংবাদিকরা দুপুরে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করেছেন। এই ঘটনার প্রতিপক্ষরাও থানায় অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় লামা উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকরা গভীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। লামা মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর বার বার নোংরা হামলার ঘটনা মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য বাধা হিসাবে দেখছেন সংবাদকর্মীরা।’