শৃঙ্খলা-প্রগতি-নিরাপত্তা এই মন্ত্রে উজ্জিবীত হয়ে সাফল্য ও সংগ্রামের এক যুগপূর্তি উদযাপন করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। যারা শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় একযুগ ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছে। দেশের শিল্প খাতের অব্যাহত নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।
এরপর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা, সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিল্প ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ বিনিয়োগবান্ধব ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের আগে কোনো শিল্প কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ও মালিক পক্ষের সঙ্গে বিভেদ-সংঘাত সৃষ্টি হলে স্থানীয় পুলিশকে ভোগান্তি পোহাতে হতো। এক্ষেত্রে ইন্ডস্ট্রিয়াল পুলিশ শ্রমিক অসন্তোষ পুঞ্জিভূত হওয়ার আগেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিশৃঙ্খলা নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা পালনে সমর্থ হয়।
মূলত শিল্প মালিকদের সংগঠনসমূহ বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএসহ বিভিন্ন শ্রমিক নেতাদেরর সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সামগ্রিকভাবে শিল্প ক্ষেত্রে বিশেষ করে পোশাক শিল্পখাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এখন মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের কাছে এক আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশের এই ইউনিটটি দীর্ঘ এক যুুগের পথ চলায় সময়ের আর্বতনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্প সেক্টরে বর্তমানে আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মূলত সেই দেশের শিল্প ও শিল্পায়নের ওপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্প খাতের ভূমিকা অপরিসীম। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাকালে ও সাম্প্রতিক চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থায় ছোট বড় অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।
এ বাস্তবতায় কর্মী ছাঁটাই সহনশীল পর্যায়ে রাখা, বেতন-ভাতা পরিশোধ, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিল্প এলাকাকে শান্ত রাখতে ভূমিকা পালন করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। এছাড়াও মহামারি করোনার প্রার্দুভাবকালীন শিল্প এলাকায় করোনার সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, মাস্ক পরতে উৎসাহ দেওয়া, খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নানা সমস্যার সমাধান করে থাকে। বিদেশীদের পাশাপাশি ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তায় তারা ভূমিকা রাখছেন। ঈদ বা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবের আগে রুগ্ন কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা নিয়ে যেন শ্রমিক অসন্তোষ না ঘটে সে ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে সমস্যা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে থাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।
শিল্পাঞ্চলের অপরাধের মাত্রা ও প্রকৃতি ভিন্নতর উল্লেখ করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, শিল্প সংশ্লিষ্ট মহলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প অধিক্ষেত্রে অবস্থিত ৬টি ইউনিটের মাধ্যমে ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শিল্প সংশ্লিষ্ট মোট ৩শ ৪০টি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নিস্পত্তি করে আসছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে কাঙ্ক্ষি ত উন্নয়নের ফলে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং বিনিয়োগ ক্রমেই বাড়ছে।
গত এক যুগে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা অপরিসীম বলে মনে করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে শিল্পাঞ্চলের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শিল্প কল-কারখানা পুনর্নির্মাণ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অগ্রণী ভূমিকা পালনে অবতীর্ণ হন। তারই ধারবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হবে।
এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআই'র সভাপতি এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।