সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিলঃ
চট্টগ্রাম চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের বাইনজুরি গ্রামে প্রতি বছরের মত এবারের ৩১ পৌষ উত্তরায়ন সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে শ্রী শ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্য দীঘির মেলা ও পূণ্যস্নান রোববার সম্পন্ন হয়েছে। মূল আকর্ষণ পূণ্যস্নান, দীঘিতে দূধ উৎসর্গ, অশ্বত্থ গাছে সুতারগীট দান কবুতর উৎসর্গ, পাঠা বলি, পুজো দান, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ইত্যাদি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় সনাতন বা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন ছাড়াও মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। নাগরদোলা, কৃত্রিম রেল, নৌকাসহ বিভিন্ন রাইড শিশু-কিশোরদের আকর্ষণ করেছে। মোয়া-মুড়ি, তীল, খাঁজা, টপি, প্যারা, সনপাপড়ি, ভাপাপিঠা, চিতই পিঠা, লুচিসহ শতাধিক রকমের খাবার সামগ্রী, রকমারি প্রসাধনী, শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ-মাংস, কুটিরশিল্প সামগ্রী, বেত ও কাঠের তৈরী নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও আসবাবপত্র, প্লাস্টিক-ফইবারের জিনিসপত্র,শোপিস, বইপত্র, ভ্রাম্যমান হোটেল-রেস্টুরেন্ট, সেলুন, লৌহজাত সামগ্রী ইলেকট্রনিক-ইলেকট্রিক সামগ্রী ইত্যাদির বিকিকিনির ধূম পড়ে। দীঘি কমিটির প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও কাউন্সিলিং-র ব্যবস্থা করে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ পর্যাপ্ত ফোর্সের মাধ্যমে মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে মেলা হলেও পকেটমারের উপদ্রব ছিল। বহু মোবাইল ফোনসেট ও মানি ব্যাগ চুরি হয়েছে অনেকের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ধর্মীয় সাধু বলেন, পর্যাপ্ত শৌচাগার নির্মাণ এবং সাধুনিবাস, অতিথিশালা ও আশ্রম প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবী বা প্রয়োজন। মেলায় আসা খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক সোয়েব ফারুকী বলেন, প্রাচীন এ এলাকার কৃষ্টি ও ঐতিহ্য বাড়িয়েছে। ব্যাপ্টিস্ট জেসন প্রমোদ বলেন, এ ধরনের মেলায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটে বিধায় মেলার গুরুত্ব বাড়ে। নারী নেত্রী সঞ্চিতা বড়ুয়া জানান, বরমার শুক্লাম্বর দীঘির মেলা আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য উন্নয়নকর্মী চাইহ্লা প্রু মার্মা বলেন, অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল এ মেলায় আসা, আজ তা পূরণ হল। হবিগঞ্জ থেকে আসা সজল মজুমদার জানান, বিভিন্ন মানত নিয়ে ও পূণ্যস্নানের জন্য আমি প্রায় আসি এবং উপকৃত হই। এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় সপরিবারে আসতে পেরে খুব খুশী লাগছে। সাতকানিয়ার মাধবী নাগ বলেন, শৈশবে আমরা মেলার কয়েকদিন আগে মামার বাড়ি আসতাম, মেলায় দীর্ঘসময় অবস্থান করে ধর্মীয় কাজ সেরে কেনাকাটা করতাম। এখন কালের বিবর্তনে, পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় আজকাল আমরা দ্রুত মেলা ত্যাগ করি।
শ্রীশ্রী শুক্লাম্বর দীঘি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হারাধন দেবের সভাপতিত্বে ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিমল দেবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পাট ও বস্ত্র এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি। সকালে বিশেষ অতিথি হিসেবে মেলা পরিদর্শন করেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন, মেলা কমিটির সভাপতি ও বরমা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খোরশেদ আলম টিটু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রী অরূপ রতন চক্রবর্তী, চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শ্রী বলরাম চক্রবর্তী, বরমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী সালাহউদ্দীন প্রমুখ।
ইনএনওর সাথে পরিদর্শন টিমে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম টিটু, উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রাণী চন্দ, সমাজসেবা অফিসার রাসেল চৌধুরী, ভেটেরিনারি সার্জন মো. সাদ্দাম হোসেন, পল্লী উন্নয়ন অফিসার ইমরান হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) মেরী চৌধুরী, থানার উপ-পরিদর্শক অজয় দাশ, তথ্য সেবা কর্মকর্তা শাপলা খাতুন, সাংবাদিক সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল, সিএ উর্বশী দাশ প্রমুখ। মেলা সার্বক্ষণিক তদারকি করেন দীঘি কমিটির সদস্য ড. প্রফেসর বিপ্লব গাঙ্গুলী, সাবেক সভাপতি মাস্টার বিজন ভট্টাচার্য্য, নৃপতি দত্ত, বিপ্লব চৌধুরী, আশীষ দেব, ডা. কাজল কান্তি বৈদ্য, মেম্বার অমর ভট্টাচার্য্য, সুরঞ্জিত ভট্টাচার্য্য ধন, মেম্বার মধুসূদন দত্ত, প্রদীপ দেব, পরিমল মহাজন, নারায়ণ দত্ত, অসীম ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।