মো. আবদুর রহিমঃ ৫৩ বছরে পা রাখলো বাংলাদেশ। দেশের বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার লক্ষ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে ঘাতকের বুলেটে শাহাদাত বরণের পর পথ হারায় বাংলাদেশ। দীর্ঘ সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় গণতন্ত্র নির্বাসনে ছিল। টানা ২১ বছর ছিলো সামরিক ও স্বৈরশাসন। ১৯৯১ থেকে ২০০১, ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৭ ও ২০০৮ এ সময় গুলো ছিলো দেশ ও জাতির অন্ধকার যুগ। নির্যাতন, খুন, গুম, মিথ্যাচার, গুজব, ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বন্দি ছিলো বাংলাদেশের মানুষ। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছর ছিলো অন্ধকার। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ আলোর পথে ফিরে আসে। ২০০১ এ আবারও চলে যায় সেই অমানিশার ঘোর অন্ধকারে। ২০০৭ ও ২০০৮ এ সেনা সমর্থিত সরকারের যুগ ছিল এক নির্যাতনের সময়। ২০০৯ থেকে বাংলাদেশ নতুন যুগে পা রাখে। জাতির পিতার বাংলাদেশ ফিরে আসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। সেই থেকে টানা ৪টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশকে টেনে তুলে অন্ধকার থেকে আলোতে। দীর্ঘ ১৫ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এসময় নিম্ন আয়ের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশমায় বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় ও উন্নয়নশীল দেশ। ষড়যন্ত্র, গুজব, মিথ্যাচার, দুর্যোগ, দুর্বিপাক, করোনা মহামারি, যুদ্ধবিগ্রহসহ নানামুখি প্রতিকূলতা জয় করে বাংলাদেশ সামনে এগুচ্ছে সমানতালে। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশকে নিয়ে ছিলো দেশ-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র। সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাস, নাশকতা, নৈরাজ্য, গুজব, মিথ্যাচার ছিলো সীমাহীন। এতসব গভীর সংকট উত্তরণ করেছে বাংলাদেশ। দ্বাদশ নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে টেনে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে ভোটে বিজয়ী করেছে। ২৯৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২২৩টি আসনে জয় পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ৬২টি সংসদীয় আসনে বিজয় পায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ১১টি সংসদীয় আসনে বিজয় পায় জাতীয় পার্টি, ১টিতে বাংলাদেশ ওয়াকার্স পাটি, ১টিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং ১টিতে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি জয় পায়।
আরও পড়ুন ইশতেহার বাস্তবায়নে সদিচ্ছা জরুরি
নির্বাচনের অপেক্ষায় নওগা-২ সংসদীয় আসন। বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ ১০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করে। ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ নির্বাচনী ইশতেহার জাতির সামনে উপস্থাপন করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে অর্জন করে রাজনৈতিক মুক্তির দর্শন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। ২০২১ সালে অর্জন করে অর্থনৈতিক মুক্তির দর্শন মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের সামনে লক্ষ্য সাংস্কৃতিক মুক্তির দর্শন, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, অন্তর্ভূক্তিমূলক, উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। ২০৭১ সালের লক্ষ্য সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখর স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়ন।
সুদুরপ্রসারী লক্ষ্য স্থির করে রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকার ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ উত্তরণ করতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অঙ্গীকার স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ। সুশাসন, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ, উন্নয়ন ও অগ্রগতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশসান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা সুপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকষ ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতির অংশগ্রহণে আগ্রহী করে তোলা হবে বর্তমান সরকারের কাজ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা
২০০৮ সালে ‘দিন বদলের সনদ’ ২০১৪ সালে ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে’, ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইশতেহার ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচন, অনুন্নয়ন ও পশ্চাৎপদতার বিপরীতে ধারাবাহিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নির্বাচন ঘোষণা ছিলো জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোষণা। বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার মা’র ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বিপুল রায় দিয়েছে। সরকার তার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দায়িত্ব নিয়ে যাত্রা করেছে। দেশ ও জাতি আশায় তাকিয়ে থাকলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দিকে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সেই উক্তি ‘মাটি আর মানুষের সাথে রাজনীতিকে এক করতে হবে। সমাজের গভীর থেকে গভীরতর স্তরে পৌঁছতে হবে। জনগণের বিশ্বস্থ বন্ধু হিসাবে সততা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে।’ এই উক্তি বাস্তবায়ন চাই আমরা সবাই।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ।