অনলাইন ডেস্কঃ লেখক, শিল্পী সংঘ উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং শ্রমিক-সংগঠক সত্যেন সেনের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামের সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা ধরনীমোহন সেন এবং মাতা মৃণালিনী সেন।
সোনারং গ্রামের সেন পরিবার ছিলো শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার এক অনন্য উদাহরণ। সত্যেন সেনের কাকা ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তার আরেক কাকা মনমোহন সেন ছিলেন শিশুসাহিত্যিক। সত্যেন সেন প্রাইমারির পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা পরিবার ও গৃহশিক্ষকের কাছেই সম্পন্ন করেন। ১৯১৯ সালে সোনারং হাই স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯২১ সালে তিনি যখন সোনারং হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকেই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ লাভ করে। ১৯২৪ সালে সোনারং হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতায় কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানকার একটি কলেজ থেকে এফএ ও বিএ পাস করেন। কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস বিভাগে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে ১৯৩১ সালে কারাবরণ করলে জেলে থেকেই বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
আরও পড়ুন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ছাত্রাবস্থায় ১৯৩১ সালে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রথম কারাবরণ করতে বাধ্য হন। এ সময় তিনি তিন মাস জেলে ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লববাদী আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩৩ সালে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হন। এ সময় তার ছয় বছর জেল হয়। সত্যেন সেন ১৯৩৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পান। ওই বছর শান্তিনিকেতন থেকে তাকে দেওয়া হয় ‘গবেষণা বৃত্তি’। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এক সমাবেশে শহীদ হন ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী কথাশিল্পী সোমেন চন্দ। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারত সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৪৯ সালে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য তাকে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী গ্রেপ্তার করে। ১৯৭১ সালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তবে তিনি প্রত্যক্ষভাবে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৬৯ সালে বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ উদীচী গঠন করেন। সত্যেন সেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। তিনি মূলত কোনো লেখাই লেখার জন্য লিখতেন না। তিনি লিখতেন মানুষের অধিকারের কথাগুলো। প্রথমে দৈনিক ‘মিল্লাত’ পরবর্তী সময়ে দৈনিক ‘সংবাদ’-এর মাধ্যমে সত্যেন সেন সাংবাদিকতা করেছেন। ১৯৭৩ সালে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতে। আশ্রয় নেন শান্তিনিকেতনের মেজদিদি প্রতিভা সেনের কাছে। তার উল্লেখযোগ্য রচনা—ভোরের বিহঙ্গী, রুদ্ধদ্বার মুক্ত প্রাণ, অভিশপ্ত নগরী, পাপের সন্তান, পদচিহ্ন, পুরুষমেধ, আলবেরুনী, সাত নম্বর ওয়ার্ড, মনোরমা মাসিমা, কুমারজীব ইত্যাদি। পুরস্কার— বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক। ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি মারা যান।
তথ্যসূত্র: কালবেলা
Leave a Reply