অনলাইন ডেস্কঃ বিশ্ববাজারে দাম কমলেও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কাতার। বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ায় জ্বালানিটির চাহিদা বাড়ায় এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। খবর রয়টার্স। কাতার এনার্জির প্রধান সাদ আল-কাবি জানান, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে দেশটিতে এলএনজির বার্ষিক উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৬০ লাখ টন হবে। এর মাধ্যমে বছরে মোট এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ কোটি ৪২ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।
উত্তর গোলার্ধে শীতকালে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকায় প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা অনেকটাই কমেছে। এর প্রভাবে এশিয়ান এলএনজির দাম প্রায় তিন বছরের সর্বনিম্নে নেমে আসে। এর পরই কাতার উত্তোলন বাড়ানোর এ ঘোষণা দিল। অন্যদিকে ২০২২ সালে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন এবং ইউরোপে রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পর প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে উঠে আসে।
মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সরবরাহ খাতে যে সংকট ছিল তা পূরণ করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। এর মাধ্যমে ২০২৩ সালে বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি রপ্তানিকারক হিসেবে কাতারকে ছাড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।
পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য এলএনজি রপ্তানিতে নতুন টার্মিনাল ব্যবহারে অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। এর পরই কাতার নতুন এ ঘোষণা দেয়। প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিকারকদের মতে, এ সিদ্ধান্তের কারণে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক পর্যায়ে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
ঘোষণায় কাতার এনার্জির প্রধান সাদ আল-কাবি জানান, এশিয়ান গ্যাসের বাজার দ্রুত বাড়বে এবং অদূরভবিষ্যতে ইউরোপে আরো জ্বালানির প্রয়োজন হবে। দোহায় আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, আরো ৫০ বছর পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের ভালো চাহিদা ও অবস্থান থাকবে। তাই প্রযুক্তিগতভাবে যখনই কোনো কিছু করার সুযোগ আসবে, আমরা তা হাতছাড়া করব না। এছাড়াও ইউরোপে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রয়োজন হবে।’
উদ্যোগের অংশ হিসেবে উত্তর কাতারের গ্যাসফিল্ড থেকে এলএনজি উৎপাদন ৭ কোটি ৭০ লাখ থেকে বেড়ে ২০৩০ সাল নাগাদ ১৪ কোটি ২০ লাখ টনে উত্তীর্ণ হবে। সে হিসেবে উৎপাদন বাড়বে ৮৫ শতাংশ। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়ার মতো প্রধান গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ উত্তোলন বাড়াতে চাইছে।
আরও পড়ুন এলএনজি সংকটে রপ্তানী কমার আশংকা
সম্প্রতি দেয়া এক নোটে গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা জানান, কাতার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি চলতি দশকের দ্বিতীয়ার্ধেও এলএনজি বাজারে নিম্নমুখীতা ধরে রাখবে।
কাতার উত্তোলন বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও ২০২৩ সালে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমে ১০ বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে জ্বালানি সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে শক্তিশালী করেছে অঞ্চলটি। এ কারণেই প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে অঞ্চলটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য। অঞ্চলটিতে ২০২৫ সালের মধ্যে এলএনজির ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছার সম্ভাবনাও দেখছে আইইইএফএ।
তথ্যসূত্র ও ভাষান্তর: বণিক বার্তা
Leave a Reply