মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশঃ
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ১০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ। যা গত বছরের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পহেলা ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়। যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় এরপর চালু হয়েছে দ্বিতীয় ট্রেন ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’। ট্রেন চলাচল শুরু হলেও স্বপ্নের ট্রেন ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত হয়ে আশাহত দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে বাণিজ্যিক ভাবে ট্রেন চলাচল শুরুর তিন মাস অতিবাহিত হলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ ট্রেনে করে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্য যেতে পারছে না। কবে নাগাদ যেতে পারবে তাও জানে না তারা।
জানা যায়, দোহাজারী থেকে রেললাইন সম্প্রসারিত হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে যুক্ত হওয়ার পর বর্তমানে দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করলেও কোন ধরনের লোকাল ট্রেন এ পর্যন্ত সংযুক্ত করা হয়নি। আন্তঃনগর ট্রেন দুইটি ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে চট্টগ্রাম স্টেশনে থামলেও দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারিত নতুন রেললাইনে নয়টি স্টেশনের মধ্যে মাঝপথে কোনো স্টেশনে না থেমে সরাসরি কক্সবাজার স্টেশনে চলে যাচ্ছে। ফলে বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ট্রেন ভ্রমণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মাঝ পথের স্টেশনের মানুষগুলো। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারিত নতুন রেললাইন নিয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত এবং আশান্বিত ছিলো দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। কারন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পর তাদের স্বপ্ন যে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ স্বল্প খরচে নিরাপদে পর্যটন নগরী কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আসা করতে পারবে। কিন্তু শুরুতেই আশাহত হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। বর্তমানে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ ট্রেনে করে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা যেতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উঠতে হচ্ছে।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলো ট্রেনে করে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আসা করবে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেলো। দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের কোন স্টপেজ না রাখায় শুরুতেই স্বপ্নের ট্রেনে চড়তে পারছে না দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। এমনকি লোকাল ট্রেনও চালু করা হয়নি এই লাইনে। অথচ বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হওয়ার খবরে শত শত মানুষ প্রতিদিন দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশনে আসছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার আগ্রহ নিয়ে। কিন্তু যেতে না পেরে মনের দুঃখ নিয়েই ফিরে যাচ্ছে তারা।
১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ প্রদানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে গত ৮ নভেম্বর দোহাজারী পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ লোকমান হাকিম রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। এবিষয়ে মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, “আখেরি ষ্টেশন দোহাজারী থেকে পর্যটন নগরী বান্দরবানের দূরত্ব ২৯ কি.মি., চন্দনাইশের দূরত্ব ১২ কি.মি., সাতকানিয়ার দূরত্ব ৯ কি.মি., আনোয়ারার দূরত্ব ৩০ কি.মি.। বিশেষ করে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটনকেন্দ্র, এবং সাতকানিয়া বাইতুল ইজ্জত বিজিবি ক্যাম্প এবং ট্রেনিং সেন্টারের দূরত্ব মাত্র ১৫ কি.মি., সেখানে কয়েক হাজার বিজিবি সৈনিক রয়েছে। এছাড়া বান্দরবান জেলায় কর্মরত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য, চিকিৎসক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যাতায়াতের দিক থেকে দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। দোহাজারী সহ আশ-পাশের উপজেলার জনগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে দোহাজারীতে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। রেললাইন সম্প্রসারনের আগে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত যে ডেমু ট্রেন চলাচল করতো অন্তত সেগুলো হলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারতো রেলপথ মন্ত্রণালয়। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের আশা পূরণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যানজটও হ্রাস পাবে।” দোহাজারী পুরনো রেলওয়ে ষ্টেশন হিসেবে সুনাম ধরে রাখতে দোহাজারীতে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন তিনি।
এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, বাংলাদেশ রেলওয়ে চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (পূর্ব) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, “দোহাজারী ষ্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের স্টপেজ প্রদানের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার লাইনে কমিউটার ট্রেন চালুর বিষয়ে আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই। কোচ এভেইলএবল হলে এবিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
Leave a Reply