চিকিৎসা গণতান্ত্রিক দেশের অন্যতম সেবাখাত হলেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য এই সেবাখাতে ব্যয় নিতান্তই অল্প। সরকারি পর্যায়ে একজন চিকিৎসাপ্রার্থীকে স্বাস্থ্যব্যয়ের ৬৯ শতাংশ দিতে হয়। এক্ষেত্রে সরকার ব্যয় করছে মাত্র ২৩ শতাংশের মতো অর্থ। আর বাকি ৮ শতাংশ আসছে দাতা সংস্থা ও ব্যক্তির মাধ্যমে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস’ এর একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাতীয় স্বাস্থ্যব্যয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে মোট খরচের ৫৪ শতাংশই খরচ করেন দেশের শীর্ষ ধনীরা। বাকিটা মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দরিদ্রসহ জনসংখ্যার অন্যান্য সব অংশ মিলে। আবার সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ায় অনেকেই বাধ্য না হলে হাসপাতালে বা চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন না বলেও উঠে আসছে। চিকিৎসাব্যয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে এই গবেষণায়। গবেষণা অনুসারে, ব্যক্তির খরচের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় ওষুধে, যা মোট চিকিৎসাব্যয়ের ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর মেডিকেল ও ডায়াগনস্টিকে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, চিকিৎসক দেখাতে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।
গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের চিকিৎসা খাত ‘প্রিভেন্টিভ হেলথ কেয়ার’ নয় ‘কিউরেটিভ হেলথ কেয়ার’ এর ওপর বেশি জোর দিয়ে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, সাধারণ মানুষের মানসম্মত চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত এবং চিকিৎসা ব্যয় লাঘব করতে হলে গ্রামাঞ্চলসহ দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ছে না বললেই চলে। এক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হলো সারা দেশে যতটুকুই স্বাস্থ্য-অবকাঠামো আছে সেটা সামগ্রিকভাবে একটি-অন্যটির সাথে সুসম্পর্কিত না। একজন রোগী গ্রাম বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপজেলা-জেলা হয়ে যে বিভাগীয় বড় হাসপাতাল বা রাজধানীতে আসছেন এমন নয়।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ করার শর্তে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মেডিসিন বিভাগের এক রেজিস্টার চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে রোগীদের জন্য যেটুকু সরকারি বরাদ্দ রয়েছে সেটুকু দিতে পারলেও সরকারকে এ ধরণের অভিযোগের মুখোমুখি হতে হতো না। নানারকম প্রতিবন্ধকতার কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোকে বিরুপ মন্তব্যের শিকার হতে হচ্ছে। চমেকে একটি ওয়ার্ডে যে লোকবল থাকার কথা সেটা নেই। ভলান্টিয়ার দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করতে হয়।’
চমেকসহ বিভাগীয় অন্যান্য সরকারি চিকিৎসালয়গুলোর প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘৬০ শয্যা বিশিষ্ট একটি ওয়ার্ডে যখন রোগীর সংখ্যা দুই শতাধিক হয়ে যায়, তখন সেবা দেয়ার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। চমেকের ওয়ার্ডগুলোতে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, তখন রোগীরাও হয়রানির শিকার হয়ে পড়েন। তবে এসব প্রতিকূল পরিস্থিতি উত্তোরণের জন্য বর্তমান সরকারের নির্দেশনায় চমেক বিভিন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ভবিষ্যতে চমেকসহ চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিশ্বে ক্রাইসিস চলছে। করোনা শেষ হওয়ার মধ্যেই আবার যুদ্ধ। সারা পৃথিবীতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। চিকিৎসাখাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়াতে হলে হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ছে না বললেই চলে।’