আজ ১লা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাউজানে নিজগৃহে পরবাসী বিধবা পারুল


রাউজান প্রতিনিধি

আশপাশে বেশ কয়েকটি পাকা দালান। তার পাশেই জীর্ণশীর্ণ একটি টিনের ঘর। বছরের অন্যান্য সময় কোনোরকমে কষ্টে দিনাতিপাত করলেও বর্ষা মৌসুমটাই বিধবা নারী পারুল আকতারের (৪৮) জীবন অভিশপ্ত। ভাঙা ঘরে নষ্ট টিনের ফুঁটো দিয়ে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানিতে পুরো ঘরটাই স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। রাউজানের পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কাশেম মেম্বার বাড়ির এক ছেলে ও কন্যার সংসারে স্বামী নুর মোহাম্মদের মৃত্যুর পর একাই জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সন্তানদের কোলেপিঠে মানুষ করেছেন পারুল। একমাত্র কন্যা সন্তানের বিয়ে দিয়ে বর্তমানে ভাঙা ঘরে মা, ছেলে তারেককে নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন।

পারুল আকতার বলেন, ছেলে তারেক একটি চায়ের দোকান চালিয়ে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। জীর্ণশীর্ণ ঘরটিতে থাকার পরিবেশ না থাকায় বেশ কয়েকবার কয়েকটি টিন পরিবর্তন করতে গেলেও বাধা দেন পাশের প্রতিবেশীরা। অথচ তারা নিজেদের ভিটেতে পাকা দালান করলেও আমাদের ঘরের টিন পর্যন্ত পরিবর্তন করতে দিচ্ছে না। সব সময় মামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের একপ্রকার জিন্মী করে রেখেছে। এর বাইরে জায়গাজমির বিরোধকে কেন্দ্র করে পারুল আকতার (৪৮) নামের ওই বিধবা নারীকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারীর চিৎকারে এলাকাবাসি তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

গত শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অলিমিয়াহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এলাকায়। গত শুক্রবার এঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। এতে বিবাদী করা হয় একই গ্রামের মোঃ ফরিদ (৫৮), আবুল কাশেম (৬০), আশরাফুল (১৮), মুহাম্মদ সালমান (২৭), মুহাম্মদ জামাল (৩৭), বেলুয়া খাতুন (৫৫), সেলিনা আকতার (৪৫)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জন। অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, বাড়ির সামনের সড়কের পাশের জায়গা বাদীর স্বামীর খরিদা সূত্রে মালিক হয়। অভিযোগে বলা হয়, পারিবারিক জরুরী প্রয়োজনে বৈধ ওই জায়গা বিক্রয় করার চেষ্টা করলে বর্ণিত বিবাদীগণ তাহা জানতে পেরে জায়গা ক্রেতাদেরকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। যার কারণে উক্ত জায়গা বাদী বিক্রয় করতেও পারছেন না। এরমধ্যে শুক্রবার বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজসে পারুলের স্বামীর খরিদা জায়গায় অনধিকার প্রবেশ করিয়া সাইনবোর্ড এবং ৪ টি সীমানা পিলার ফেলো দেয়। বাদী প্রতিবাদ করলে বিবাদীগণ একা পেয়ে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারিতে থাকে পারুল নামে ওই নারীকে। এবং তাঁর স্বামীর কেনা জায়গা জোর পূর্বক দখল করে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আহত পারুল আকতার বলেন, তিনি স্বামী হারা বিধবা নারী। এক ছেলেকে নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া ভাঙা বেড়ার ঘরের থাকেন। ঘরের বেড়া চালা ভেঙে নিচে পড়েছে। বর্ষায় পানি বেয়ে সারা ঘর ডুবে যায়। কিন্তু বিবাদীদের বাধার কারণে তিনি নতুন ঘর কিংবা সংস্কার কাজও করতে পারছেনা। অসহায় পারুল আকতারের দাবী সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে তাঁর স্বামীর ক্রয়কৃত জায়গা স্থানীয় রাশেদ নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রির জন্য বায়না চুক্তি করলে রাশেদের নামেও অপপ্রচার চালাচ্ছে ফরিদ গংরা। তাঁদের উদ্দেশ্য কিছুতেই যেন পারুল জায়গা জমি বিক্রি করতে না পারে। এখন রাশেদ নিজের টাকায় জমি কিনতে গিয়ে সমাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে বিবাদীদের দুজন মুহাম্মদ ফরিদ ও আবুল কাসেম বলেন, জায়গাগুলো নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। জায়গার রুপ পরিবর্তন না করতেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তাই আমরা তাঁদের বাধা দিয়েছি। রাউজান থানায় যোগাযোগ করা হলে ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা থানার কাজ পুরোপুরি শুরু করতে পারিনি। আরও সময় লাগবে তবে যেসব অভিযোত আসছে আমরা সেগুলো জমা রাখছি। থানার কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করা গেলে তখন সব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর