চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক: দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের মেধাবী ছেলে মেয়েরা ৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। সে লক্ষ্যে এগুচ্ছি আমরা।
রবিবার (৯ জুলাই) ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৩-২৪’ এর নির্বাচিত ফেলোদের অ্যাওয়ার্ড প্রদানকালে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এবার ৪৮ জন উচ্চ শিক্ষার্থী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপ (পিএমএফ) পেয়েছেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ডিগ্রী অর্জনের জন্যে ৩৮ জনকে মাস্টার্স ও ১০ জনকে পিএইচডি পিএমএফ প্রদান করা হয়।
বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্যে এ পর্যন্ত ২৭৭ জনকে মাস্টার্স এবং ১০৮ জন পিএইচডি ফেলোকে এই বৃত্তি দেয়া হয়েছে। এই বৃত্তি পেতে হলে প্রত্যেক আবেদনকারীকে আগে নিজ যোগ্যতায় বিশ্বের ১শ’ র্যাংকিংয়ের মধ্যে থাকা যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হয়। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গর্ভন্যান্স ইনোভেশান ইউনিট (জিআইইউ)-এর আওতায় এই বৃত্তির জন্যে আবেদন করতে হয়। সকল খাতে সম্পদের সক্ষমতা উন্নয়ন ঘটাতে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী এই পিএমএফ চালু করেন। গভর্মেন্ট ইনোভেশন ইউনিটকে (জিআইইউ) পিএমএফ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা বিসিএস ও নন বিসিএস এবং বেসরকারি প্রার্থী এই তিন ভাগে বৃত্তিটি প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বৃত্তি পাওয়া এসব ফেলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন।
ফেলোশিপ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এখন দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে, এটাকে আমি বলবো স্মার্ট পপুলেশন। সেই সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি, ভবিষ্যতে সেটাও হবে স্মার্ট অর্থনীতি। আমাদের কৃষি, স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্র স্মার্ট হবে। জনগণকে সেবা দিতে গেলে যে দক্ষ জনবল দরকার সেটি এখনও পরিপূর্ণরূপে আমাদের নেই, তাই দক্ষ জনবল গড়ে তোলাটাই এখন আমাদের লক্ষ্য। ভবিষ্যতে আমাদের সোসাইটিও হবে স্মার্ট সোসাইটি। বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলতে চাই।’
অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন , ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর সাথে সমান তালে এগিয়ে যাবে, কোনো মতে পিছিয়ে থাকবো না, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিই। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু বৃত্তি চালু করি। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ৯৮৬ জন শিক্ষার্থী/গবেষককে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বৃত্তি/অনুদান প্রদান করি। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’ প্রণয়ন করি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থ-বছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে আমাদের সরকার। আমরা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা আহরণে সক্ষম প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। এখন থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ পৃথিবীর সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাবে, আমরা কোনো মতে পিছিয়ে থাকবো না, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই মেধাবী, বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা লেখাপড়া করছেন।’
শিক্ষাক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সাল থেকে শিক্ষা-গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করছি। ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে একটি সমন্বিত শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। আমরা ব্যান্সডক আইন-২০১০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন-২০১১, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৫, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ আইন (সংশোধিত)-২০১৮, ‘বাংলাদেশে উচ্চ-শিক্ষার কৌশলী পরিকল্পনা: ২০১৮-২০৩০’ সহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়।’
এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, এবং প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিআইইউ’র মহাপরিচালক প্রফেসর মো. আবদুল লতিফ। মাস্টার্স ও পিএইচডি ফেলোদের পক্ষে যথাক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিবলী ইসলাম এবং গণস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের গবেষণা সহকারী আফিফা আনজু তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পিএইচডি ফেলো, আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব ড. কেমএম আলমগীর কবির তার অনুভূতির কথা জানান।
Leave a Reply