নিজস্ব প্রতিবেদক: এক দফা দাবিতে অনড় হয়ে রয়েছে দেশের দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি)। এ কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে তো বটেই দেশের সর্বস্তরে বিরাজ করছে বাড়তি উত্তাপ।
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ‘এক দফা’ দাবি তুলেছে বিএনপি আর পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকার ও শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার দাবি জানাচ্ছে।
বিএনপি তাদের দাবিতে সমমনা দল ও জোটকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও সংবিধানকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও মহানগরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।আগামী ২৭ জুলাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। এরই মধ্যে দলটির নেতৃত্বে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়ে বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও।
শনিবার (২২ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠাসহ শেখ হাসিনার পদত্যাগে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের ১ দফা দাবিকে চূড়ান্ত রূপ দিতে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহা-সমাবেশের ডাক দিয়েছে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।
এতে আরো বলা হয়, শনিবার গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টুর সভাপতিত্বে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী প্রমুখ।
২৭ জুলাই সকাল ১১টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে ১২ দলীয় জোট মহা-সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা।
একই দিন দুপুর ২টায় রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে এফডিসি সংলগ্ন লিভারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ।
১২ দলীয় জোটের এ কর্মসূচির প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বৃহত্তম গণআন্দোলনের এক দফা হলো ভোটাধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ। আর কোনো দফা নেই। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য যুগপৎ এ আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছি।’
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যেও জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না, করবে না। আওয়ামী লীগ ভোটাধিকার হরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সংবিধান মেনেই নির্বাচনে আসতে হবে।’
বিএনপির এক দফার কথা উল্লেখ করে এর পাল্টা ঘোষণা দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদেরও এক দফা, শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই হবে এবং শেখ হাসিনাই এর নেতৃত্ব দিবেন।’
যদিও উভয় রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি পালনকালে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোর অনেক জায়গায় দেখা গেছে তীব্র যানজট। আবার গণপরিবহন কম থাকায় পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমাদের দেশে রাজনীতির দু’টি ধারা রয়েছে। এর একটি হলো সমাজ পরিবর্তনের, আরেকটি ক্ষমতা কেন্দ্রিক। ১৯৪৭, ১৯৬৯, ১৯৭১ সালে আমরা সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি দেখেছি। এখন যেটা হচ্ছে সেটা ক্ষমতা কেন্দ্রিক। যে রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আছে, তাদের একটি ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, আরেকটি ক্ষমতায় আসতে চায়। ফলে তাদের উভয়ের আদর্শ একই। এখন যদি শিক্ষিত-সচেতন মানুষ সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতিতে মনোযোগ দেয় তাহলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।’
Leave a Reply