আজ ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভয়াল ২৯ জুলাই: এইদিনে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী


মো: শোয়াইব,হাটহাজারী প্রতিনিধি

আজ ২৯ জুলাই উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের শোকের দিন। এদিনেই আমানবাজার এলাকার আর এন্ড জে কোচিং সেন্টার থেকে ষোলজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলাধীন খৈয়াছড়া ঝর্ণা উপভোগ শেষে মাইক্রোবাস যোগে বাড়ি ফেরার পথে দুপুর একটার দিকে খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব খৈয়াছড়া গ্রামের ঝরনা এলাকার রেলক্রসিংয় পার হতে গেলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন প্রভাতী’র ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মাইক্রোবাসের চালকসহ এগারজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত হয় সাতজন। ঘটনার সাত এবং আটদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরো দুই শিক্ষার্থী।

নিহতরা হলেন, নতুনপাড়া আলম কোম্পানির বাড়ির ওয়াহিদুল আলম জিসান, মজিদ আব্বাস চৌধুরী বাড়ির রিদুয়ান চৌধুরী, লাইনম্যান কবিরের বাড়ির জিয়াউল হক সজিব, একই বাড়ির আয়াতুল ইসলাম আয়াত, মধ্যম মাদার্শা ছিনেফুল এলাকার মোস্তফা মাসুদ রাকিব, মাদার্শা এলাকার সাজ্জাদ, বজল কন্ট্রাক্টর বাড়ির মোসহাব আহমেদ হিসাম, যুগিরহাট ফকিরপাড়ার হাছান, সাব রেজিস্টার বাড়ির তাসমির হাছান, মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা নিরু, আবদুল ওয়াজেদ মাস্টারের বাড়ির ইকবাল হোসেন মারুফ, বালুছড়া এলাকার শান্ত ও ফতেপুর ইউনিয়নের আসিফ। সেদিনের গুরুতর আহত নিহত সজিবের চাচাত ভাই বেঁচে যাওয়া এইসএসসি পরীক্ষার্থী নাহিদুল আলম সৈকত বলেন, ভয়াবহ সেদিনের কথা মনে পড়লেই গা শিউরে উঠে। শিক্ষক সহপাঠীদের স্মৃতি ভেসে উঠে। দুর্ঘটনায় ডান পা, বাম চোখ, মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলেন। দুই দুইবার অস্ত্রপাচার হয়েছে। আড়াইমাস চিকিৎসার পর বাড়িতে ফিরেন। এখনও ভালভাবে হাঁটতে পারেন না। একই ইউনিয়নের এইসএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ মাহিন দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর জ্ঞান ফিরে। পুরোদমে সোজা করতে পারেন না মেরুদন্ড। এইসএসসি পরীক্ষার্থী তানভির হাসান হৃদয়। মাথা, পিঠ, হাত ও বুকে প্রচন্ত আঘাত পেয়েছিলেন। যার জ্ঞান ফিরে দুইদিন পর। টানা তেরদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছিলেন। বাচা মিয়া সওদাগর বাড়ির এইসএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ ইমন পায়ে আঘাত পেলেও একদিন পরেই বাড়ি ফিরেন। শারিরীকভাবে সুস্থ হলেও এখনও নাড়া দেয় সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। মাইক্রোবাসের হেলপার চট্টগ্রাম নগরীর শেরশাহ কলোনির তৌকির ইবনে শাওন। বাম হাত ডান পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলেন মাথায়। এখনও হাত পায়ে প্লেট লাগানো আছে জানিয়ে বলেন, দুর্ঘটনার পর গাড়ির হেলপারের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। গাড়ি দেখলেই ভয় পান। পেটের তাগিদে রাজধানী ঢাকায় মেশিনারী কাজ শিখছেন।

এদিকে সরেজমিনে জানা গেছে, নিহতদের পরিবার তাদের হারানো সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় যার যার সামর্থ্যানুযায়ী কোরান খতম, দোয়া মাহফিলসহ দুঃস্থদের খাবার বিতরণ করবেন। এছাড়া সামাজিকভাবে আজ দিনব্যাপী নিহতদের স্মরণে শোকসভা, কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ, মসজিদে মিলাদ, দোয়া ও এতিম দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে বলেও জানা গেছে।

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর