এসবি জীবন:
আমাদের পূর্বপুরুষরা সাতচল্লিশের দেশভাগ আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী নিজের দেশ মাতৃকা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমির প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সেদিন শর্তহীনভাবে স্বদেশে ফিরে যে ভুল করেছিলেন, আমরা বর্তমান প্রজন্ম সে ভুল আর করবনা বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী। ২৯ সেপ্টেম্বর শহরতলী বোয়ালখালী উপজেলার শিক্ষা সংস্কৃতির আতুরঘর কানুনগোপাড়ার শতবর্ষী বান্ধব পাঠাগার মিলনায়তনে ৯নং আমুচিয়া ইউনিয়ন শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ-সব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, সেদিনের শর্তহীনতার উপহার হিসেবে আমাদের সম্পত্তি আজ পরিনত হয়েছে শত্রুসম্পত্তিতে। আর দেশের আপামর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টানরা তাদের নিজস্বতা ভুলে হয়ে উঠেছে 'সংখ্যালঘু সম্প্রদায়'। শুধু ভৌগোলিকভাবে সংখ্যালঘু করে তারা ক্ষান্ত হয়নি, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করে আমাদেরকে বানিয়ে রেখেছে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তাইতো স্বাধীনতার পাঁচদশক পেড়িয়ে গেলেও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আমাদেরকে আজো বারবার পথে নামতে হয়। লায়ন শিবু প্রসাদ ভদ্র জীবন'র সঞ্চালনায় দু'টি পর্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন, ড. বিভূতি ভূষণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বাবুল মজুমদার। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ৯নং আমুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বোয়ালখালী উপজেলার আহ্বায়ক কাজল কান্তি দে।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজীব বৈদ্য। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলার অর্থ-সম্পাদাক সঞ্জয় দে, সদস্য প্রণব দাশ, কংকন দাশ ও বোয়ালখালী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচীব সরোজ চৌধুরী।
সম্মেলনের বিভিন্ন পর্বে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আসন অলংকৃত করেন, অখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমন কান্তি দাশ, আমুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কুমকুম চৌধুরী, শাকপুরা ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম কানু সেন, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ বোয়ালখালী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ প্রভাস চক্রবর্ত্তী, পৌরসভা শাখার সভাপতি আশুতোষ চৌধুরী টিকলু, সাধারণ সম্পাদক বিষু ঘোষ, কধুরখীল ইউনিয়ন'র নব-নির্বাচিত সভাপতি পার্থ সারথী চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক লিটন ধর। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, বন কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরী, শ্যামল দেব সবুজ, ব্যাংকার রঘুনাথ মজুমদার, উৎপল চৌধুরী (মিঠু), সুব্রত চৌধুরী, সত্যজিত সরকার (পিন্টু), সাংবাদিক সবুজ অরণ্য, নিপু দে প্রমূখ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে সম্মেলনের উদ্বোধক ও ৯ নং আমুচিয়া ইউনিয়ন'র চেয়ারম্যান কাজল কান্তি দে সর্ব্বসম্মতিক্রমে আগামী তিন বছরের জন্য সৃজন চক্রবর্ত্তী (সুমন) কে সভাপতি, সজিব চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ও রুবেল সদ্দারকে অর্থ- সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করেন। সম্মেলনের উদ্ধোদক কমিটি ঘোষণার পর তাঁর সমাপনী বক্তব্যে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্য বলেন, দায়িত্ব গ্রহণ করে ঘরে বসে থাকলে হবেনা। প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটির আওতাধীন সব-কটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনসহ কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচীতে অংশগ্রহন নিশ্চিত করে দাবি আদয়ে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, সমতলের অধিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ কার্যকরীকরণ ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নসহ ৭দফা দাবি বাস্তবায়নের
দাবিতে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বিগত ৭ জানুয়ারি'২৩ (শনিবার) রমনা কালীমন্দির সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ শেষে রোডমার্চ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
তৎপরবর্তীতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে-ও দাবি আদায় না-হওয়ায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ২২ সেপ্টেম্বর'২৩ (শুক্রবার) বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড় ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী'র নেতৃত্বে ঐতিহাসিক লালদিঘি চত্বর সংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেটের সম্মুখে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকাল-সন্ধ্যা গনঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারি দলের সংখ্যালঘু বান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল শুক্রবার (৬ অক্টোবর'২৩) বিকাল ৪টায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ করার পাশাপাশি আগামী ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহা-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।