ফারুকুর রহমান বিনজু, পটিয়া প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপে পরিনত হয়েছে দক্ষিণ বাকখাইন। বর্তমানে অঞ্চলটিতে প্রায় দু’শতাধিক হিন্দু পরিবারের বসতি। সেখানে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। নেই আধুনিক চিকিৎসালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি নিত্যদিনের বাজার ব্যবস্থাও এখানে দুরূহ বিষয়। এলাকাবাসীর দাবি, বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানিয়ে বাকখাইনে একটি ব্রীজ ও স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি ব্রীজ ও স্লুইচ গেইটের অভাবে পটিয়া উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডটি যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হয়েছে। ওই ওয়ার্ডটি পটিয়া ও পাশ্ববর্তী আনোয়ারা উপজেলা সীমান্তে হওয়ায় নানা ভাবে অবেহেলিত। ফলে এলাকাবাসী বিভিন্ন ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। খালের উত্তর পাড়ে সরকারি অর্থায়নে একটি বেঁড়িবাধ নির্মাণ করলেও দক্ষিণ পাড়ের বাকখাইন এলাকায় নেই কোন বেড়িবাঁধ। প্রায়শই মানুষের ঘর-বাড়ি ও চলাচলের রাস্তায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে। তবুও থেমে নেই এ দ্বীপের অসহায় মানুষের জীবনযুদ্ধ। এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে মাটি দিয়ে বেঁড়িবাধ নির্মাণ করা হয়েছে। পটিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপ এলাকাটি সম্প্রতিক পরিদর্শন করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক সংশ্লিষ্ট এলাকার জনৈক জনপ্রতিনিধি চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘দক্ষিণ বাকখাইন এলাকায় ব্রীজ নির্মাণ করতে হলে আনোয়ারা আসনের সংসদ সদস্য ও ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং পটিয়ার সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর সমন্বয় দরকার।’
উপজেলার দক্ষিণ বাকখাইন ও উত্তর বাকখাইনের মাঝামাঝিতে রয়েছে শিকলবাহা খাল। এটি শঙ্খ নদীর সাথে সংযুক্ত, শিকলবাহা হয়ে কর্ণফুলী নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে। খালে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে। দক্ষিণ বাকখাইনের লোকজন ছাড়াও পাশ্ববর্তী আনোয়ারা উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্য সদ্বীপপাড়া নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কও রয়েছে এখানে।
খাল পারাপারের জন্য সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নৌ ঘাটে থাকে ২টি নৌকা। এ নৌকা দিয়ে লোকজন পারাপার হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দক্ষিণ বাকখাইন এলাকাটি পটিয়া উপজেলায় হলেও পাশ্ববর্তী আনোয়ারা উপজেলার এলজিইডি থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩টি ব্রীজ ও একটি স্লুইচ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে পুরোনো স্লুইচ গেইট ভেঙে যাওয়ায় ও পূর্ব পাশের একটি ব্রীজ ও পশ্চিম পাশের আরেকটি ব্রীজের সাথে দীর্ঘ ১১ বছর সংযোগ না দেয়ায় এলাকাটি বর্তমানে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিনত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় বাসিন্দা ও কাশিয়াইশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুকুমার মল্লিক চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘দক্ষিণ বাকখাইন পটিয়া উপজেলায় স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরও কোন উন্নয়ন হয়নি। তবে বর্তমানে এলাকাবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।’
পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ‘দক্ষিণ বাকখাইন এলাকাটি খুবই অবহেলিত। কী কারণে উন্নয়ন হয়নি তা আমি জানি না। স্লুইচ গেইট ভাঙা ও ব্রীজের সঙ্গে রাস্তার সংযোগ না থাকায় লোকজন দ্বীপের মধ্যে বসবাস করছে। বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপের মানুষের জন্য রাস্তা সংস্কার ও মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’