সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাবার লাশ রেখে মেয়েকে বসতে হয়েছে (এসএসসি) পরীক্ষার হলে। ৬ মার্চ (বুধবার) সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ-প্রাণহরি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়েটি পরীক্ষা দিতে বসে।
মেয়েটির নাম তাসমিন আক্তার(১৭) । তাসমিন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ভ্যানগাড়িচালক আহমদ হোসেনের মেয়ে। তাদের বাড়ি উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণতোয়া এলাকায়।
তাসমিন আক্তারের চাচা আবুল কাশেম বলেন, আজ সকাল সাতটার দিকে বড় ভাই আহমদ হোসেনের মৃত্যুর খবর আসে। এ সময় তাঁর এসএসসি পরীক্ষার্থী ভাতিজি পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে মেয়েটি ভেঙে পড়ে। পরিবারের সদস্য বুঝিয়ে মেয়েকে পরীক্ষার হলে পাঠিয়েছেন।
পরীক্ষা কেন্দ্র ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, তাসমিন আক্তারের বাবা আহমদ হোসেন ভ্যানগাড়িতে করে চট্টগ্রাম শহরে আসবাবপত্র আনা-নেওয়ার কাজ করেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাতকানিয়ার দস্তিদার হাট থেকে আসবাবপত্র নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকানন এলাকায় যান। আজ বুধবার ভোরে নন্দনকানন থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। তাঁর ভ্যানটি পটিয়ার ভেল্লাপাড়া সেতুর ওপর উঠলে দ্রুতগতির যাত্রীবাহী একটি বাস ভ্যানগাড়িতে ধাক্কা দেয়। এতে আহমদ হোসেন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ-প্রাণহরি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকছিল তাসমিন আক্তার। এ সময় তাসমিনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল তার সহপাঠীদের অনেকে। চোখের পানি মুছতে মুছতে তাসমিন বলে, ‘আজ পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরলে বাবা আমার সঙ্গে দুপুরের ভাত খেতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো না।’
পরীক্ষাকেন্দ্রটির দায়িত্ব থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক ঝুন্টু চক্রবর্তী বলেন, বাবার লাশ হাসপাতালে রেখে মেয়েটি এখন পরীক্ষার হলে, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। শিক্ষকেরা মেয়েটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং মেয়েটি যাতে ভালোভাবে পরীক্ষা শেষ করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখছেন।
ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, বাবার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে তাসমিন আক্তার পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে গিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি বাড়িতে আনার চেষ্টা চলছে।