#জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনা
#নবায়িত শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা দেয়ার আগ্রহ
#ফুড প্রসেসিং, মেশিনারিজ, আইসিটি, শিপবিল্ডিং এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ
#ইতালির রপ্তানিকৃত মেশিনারিজের জন্য সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমের চাহিদা বাড়ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও এর গুরুত্ব রয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার বিষয়ে বর্তমানে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বের সকল দেশ। বাংলাদেশও এগুচ্ছে সেই লক্ষ্যে। রপ্তানিতে বাংলাদেশের অন্যতম গন্তব্য ইতালি। উন্নত এই রাষ্ট্রে ব্যাপক শ্রমবাজার রয়েছে। প্রতি বছর দেশটিতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিকেরা পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে দেশটিতে টিকে থাকতে এবং সমৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজন হয় দক্ষতার।
সম্প্রতি সম্প্রতি দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা জানিয়েছেন ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্থোনিও অ্যালেস্যান্দ্রো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরিতে যৌথভাবে টেকনিক্যাল ট্রেনিং ও ম্যানেজমেন্ট এডুকেশন সেন্টার গড়ার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে দেশটি।
ইতালির রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ২ লাখ জনশক্তি ইতালিতে সুনামের সাথে কাজ করে ২০২২ সালে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরো রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ইতালিতে আরো দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। ভবিষ্যতেও বৈধপথে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি আমদানি করা হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে যৌথভাবে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এবং ম্যানেজমেন্ট এডুকেশন সেন্টার করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশের ফুড প্রসেসিং, মেশিনারিজ, আইসিটি, শিপবিল্ডিং এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ইতালির ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতালি একটি পরিবেশবান্ধব দেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জি-২০ সম্মেলনে বায়োফুয়েল ইনিশিয়েটিভ এ স্বাক্ষর করেন। ফলে বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এক্ষেত্রে ইতালি বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা প্রদানে আগ্রহী।
আরও পড়ুন কৃষিখাতের জন্য বাংলাদেশ থেকে জনবল নিতে আগ্রহী ইতালি
অ্যালেস্যান্দ্রো আরো বলেন, ‘ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ইতালি। গত বছর ইতালি-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পার করেছে। বাংলাদেশের ৭ম রপ্তানি বাণিজ্য কেন্দ্র ইতালি। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে প্রচুর তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। ভবিষ্যৎ বাজার চাহিদানুযায়ী রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে তৈরি পোশাক বৈচিত্র্যকরণের কোনো বিকল্প নেই।’
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘ইতালিতে রপ্তানিকৃত বাংলাদেশী পণ্যের অধিকাংশই তৈরি পোশাক। তাই রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তিনি বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল, মিঠা পানির মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক খেলনা এবং বাই-সাইকেল ইত্যাদি আমদানির জন্য আহবান জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চল বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হতে যাচ্ছে।
ওমর হাজ্জাজ চট্টগ্রামের ভৌগোলিক সুবিধা ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিনিয়োগের প্রদত্ত বিভিন্ন সুবিধা ব্যবহার করে চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ইতালিয়ান ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আহবান জানান।
এছাড়া ওমর হাজ্জাজ বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার ন্যায় ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো যাতে কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখে সেজন্য রাষ্ট্রদূতের সহায়তা কামনা করেন।
চেম্বারের সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতে ইতালিয়ান মেশিনারিজের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং ইতালি থেকে আমদানিকৃত পণ্যের সিংহভাগই বিভিন্ন খাত ও শিল্পের মেশিনারিজ। তাই ইতালির রপ্তানিকৃত মেশিনারিজের জন্য সার্ভিস সেন্টার স্থাপন এবং মেরামত ও পরিচালনার জন্য অপারটেরদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে যৌথ ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের আহবান জানান তিনি।
এসময় উপস্থিত ইতালির কনস্যুল মীর্জা সালমান ইস্পাহানী, তুরস্কের কনস্যুল জেনারেল সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান, চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও ওমর মুক্তাদির, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, বিকেএমইএ’র পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান, মেরিডিয়ান গ্রুপের পরিচালক আকিব কামাল, বাংলাদেশ-কোরিয়া ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নুরুজ্জামান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, চট্টগ্রাম-এর সহকারী পরিচালক মোরশেদুল হক, ইউরো এক্সিম ব্যাংক, বিএসআরএম গ্রুপ ও ব্র্যাক প্রতিনিধিরা।