মুহাম্মদ এনামুল হক মিঠু: বছরের শুরু থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাড়িভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম। সে অনুযায়ী বাড়ছে না বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন। দেশে সরকারি চাকরিজীবীরা সুযোগ-সুবিধার উচ্চশিখরে অবস্থান করছে। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধা আকাশ-পাতাল ব্যবধান। যার ফলে বাড়ছে সামাজিক বৈষম্য। অথচ আমরা একই দেশের, একই সমাজের মানুষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরে একজন বেসরকারি চাকরিজীবীর বেতনের অর্ধেক অংশ ব্যয় হচ্ছে বাড়িভাড়ার পেছনে। বাকি টাকায় খাবার, চিকিৎসা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়সহ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর ফলে তারা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় বা সম্পদ কিছুই করতে পারছে না। বলা চলে, তাদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত ও হুমকির সম্মুখীন। দফায় দফায় সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও তার ছিটেফোঁটা বাড়েনি বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে। তারা অনেকটাই বঞ্চিত, অবহেলিত। দেশে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে একজন রিকশাচালক বা ছোট ছোট টং দোকানদাররা মাসে উপার্জন করছে ২০-৩০ হাজার টাকা; সরকারি একজন ৮ম শ্রেণী পাস চাকরিজীবীর বেতন ২১-২৫ হাজার টাকা পক্ষান্তরে একজন অনার্স-মাস্টার্স পাস যুবককে ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক সময় তারা প্রত্যাশিত চাকরি না পেয়ে কম বেতনে চাকরি করছে কোনোরকম খেয়েপরে বেঁচে থাকার তাগিদে।
সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যেমন নার্স, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তাদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন করলেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি নজর দেয়নি, যা খুবই দুঃখজনক । বেসরকারি চাকরিজীবীদেরকে দেখার যেন কেউ নাই। অবহেলায়, বঞ্চনাই - লাঞ্চনাই এবং এই বেতন বৈষম্যতায় এক প্রকান অধিক শোকে পাথরে পরিণত হচ্ছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জীবন পটভূমি। দেশে কিছু গার্মেন্টস শ্রমিকদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো থাকলেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের তা নেই। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশে বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ‘যেনতেন’ বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে। সরকারকে প্রথমে দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য বিভিন্ন শিল্প-কারখানা স্থাপন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে দেশে যেমন অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হবে, তেমনি তা বেকারত্ব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি । উন্নত দেশগুলোয় সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধার তেমন কোনো পার্থক্য নেই। সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা প্রায় একই রকম। তাই উন্নত দেশগুলোয় সরকারি চাকরিতে আমাদের দেশের মতো এত হুড়োহুড়ি বা চাপাচাপি নেই। যে যেটা পাচ্ছে, তা নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকছে। কারণ, যেহেতু সুযোগ-সুবিধা প্রায় একইরকম। এ অবস্থায় সরকারকে দেশের বিপুলসংখ্যক বেসরকারি চাকরিজীবীর জীবনমান উন্নয়নে ভাবতে হবে। দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী বেসরকারি চাকরির সঙ্গে যুক্ত। সরকার ইতিমধ্যে উন্নত বিশ্বের ন্যায় বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন স্কিম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও ইতিবাচক পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রত্যেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে বেতন, প্রফিডেন্ট সহ, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করলে বেসরকারি চাকরিজীবিদের মানসিক শান্তি স্বস্তি আসবে এবং চাকরির নিশ্চয়তা পেলে তারা হৃদয় নিংড়িয়ে পরিশ্রম করবে এবং স্ব স্ব প্রতিষ্টানকে সুউচ্চ শিখরে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর হিসেবে কাজ করবে। যাহা বাংলাদেশের বেকারত্ব কমিয়ে অর্থনৈথিকভাবে এগিয়ে যাবে।। এর পাশপাশি বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি নজর দিয়ে সরকার তাদের জীবনমান উন্নয়নে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো ইত্যাদি নির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটা সর্বস্তরের প্রত্যাশা।