মূল্যস্ফীতিতে টলছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে উত্তীর্ণ হয়েছিল,যদিও মে মাসে সেটা কমে ৪ শতাংশে পৌঁছায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এবং স্বল্পোন্নত দেশের অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে গভীর ক্ষত। ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা ও সুদানের মতো দেশগুলোর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। খবর সিএনএন।
আইএমএফের প্রকাশিত জরিপ অনুসারে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আর্জেন্টিনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ছিল দ্বিগুণ। একই সময়ে ভেনিজুয়েলায় দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার গুণে। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। সর্বোচ্চ ৪ শতাংশে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র। ২০০৭-০৮ অর্থনৈতিক সংকটেও পরিস্থিতি ব্যতিক্রম ছিল না খুব একটা। উন্নত দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি গড়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যেই ওঠানামা করেছে। কিন্তু ২০২১ সালের কভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের পর বদলে যায় চিত্র। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি প্রথমে ৫ দশমিক ৩ ও পরে ৭ দশমিক ৩-এ উত্তীর্ণ হয়েছে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিই মূলত মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। এমনকি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আগেও প্রভাব দৃশ্যমান ছিল কিছুটা। আক্রমণ পরিস্থিতিকে আরো ঘনীভূত করেছে। ইউরোপকে গ্যাসের জন্য বিকল্প খুঁজতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় পাইকারি পণ্যের দাম বাড়ার বড় মাশুল আছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য ও আবাসন খাতে সৃষ্টি হয় চাপ। প্রভাব পড়ে বাসা ভাড়া ও বাড়ি ক্রয়ের ওপর।
আশির দশক থেকেই ভেনিজুয়েলার মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। সম্প্রতি পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে কঠিনতম নজির হিসেবে। ২০১৮ সালে লাতিন আমেরিকার দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ১ লাখ শতাংশেরও বেশি দাঁড়ায়। সরকারকে বাধ্য হয়ে নতুন মুদ্রা চালু করতে হয় লেনদেন সহজ করতে। ২০২২ সালে এসেও ভেনিজুয়েলার মূল্যস্ফীতি ৩১০ শতাংশ, যা পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। কমে গেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা।
আর্জেন্টিনার মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়ানো হয়েছে মজুরি। প্রতি দুই মাসের ব্যবধানেই অর্থনৈতিক খাতগুলোয় মজুরি পুনর্বিবেচনা করার আবেদন আসছে। তার চেয়ে বড় কথা মানুষের হাতে টাকা থাকছে না। একদিকে রয়েছে পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম। বিপরীতে আগামী দিনগুলোয় মূল্য বাড়ার আশঙ্কা। ফলে টাকা হাতে পাওয়ার পর পরই দ্রুত সময়ে নিঃশেষ করে ফেলছেন ভোক্তারা।
মূল্যস্ফীতিতে পর্যুদস্ত দেশগুলোয় ক্রেডিট পরিষেবা ভালো কাজ করে না। আর্জেন্টিনায় কোনো ক্রেডিট পরিষেবা নেই। কেউ যদি সেখানে বাড়ি কিনতে চায়, তবে তাকে এক এক করে ডলার জমাতে হবে এবং এককালীন পরিশোধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতির বিপরীতে নতুন ধরনের প্রবণতা হিসেবে শুরু হয়েছে ডলারের ব্যবহার। কারণ স্থানীয় মুদ্রার চেয়ে ডলার স্থিতিশীল। বিশেষ করে ভেনিজুয়েলায় বেড়েছে প্রবণতাটি।
আর্জেন্টিনার পরিস্থিতি ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর কিছুটা ভালোর দিকে যেতে পারে বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা। নেয়া হয়েছে নতুন নীতিমালা। কিন্তু নতুন পরিকল্পনার মানে দারিদ্র্য ও সামাজিক সংঘাত আরো এক দফা বাড়ার সম্ভাবনা। বিশেষ করে প্রথম ছয় মাসজুড়ে থাকতে পারে বিশৃঙ্খলা।
বিদ্যুৎ ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যদিও বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকরা আগামী বছরগুলোয় মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসার ব্যাপারে আশাবাদী। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুদের হার বাড়ানোর বাইরেও কিছু অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য পুনরুদ্ধার পথ এখনো সহজ নয়।
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা
Leave a Reply