সাতকানিয়া প্রতিনিধিঃ উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে কমছে গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (জিপিএ) ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ২০২২ সালে এ উপজেলায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছিলো ৩৫৩ জন, ২০২৩ সালে সেটি দাঁড়ায় ১৬৭ জনে এবং চলতি বছর ২০২৪ সালে সেটি আরো কমে ১৬১ জনে ঠেকেছে।
রেজাল্ট বিশ্লেষণে আরো জানা গেছে, উল্লিখিত সময়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমলেও ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সাতকানিয়ায় পাশের হার বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২২ সালে সাতকানিয়া থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলো ৪ হাজার ৭৪৮ জন, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬২১ এবং ২০২৪ সালে সে সংখ্যা হয় ৪ হাজার ২৪৫। বিগত বছরগুলোতে অর্থাৎ ২০২২ সালে পাশের হার ছিলো ৮৬ দশমিক ২৫, ২০২৩ সালে ৭৯ দশমিক ৮১ এবং চলতি বছর ২০২৪ সালে ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
২০২৪ সালে সাতকানিয়া থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টিতে কেউ এ প্লাস পায়নি। সবচেয়ে কম ৬২ দশমিক ৬৩ শতাংশ পাশের হার থাকা চরতি দুরদুরি উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো আরো যে ১২টি স্কুল এবার এ প্লাস অর্জন করতে পারেনি সেগুলো হলো-লায়লা মছউদ উচ্চ বিদ্যালয়, গাটিয়াডেঙ্গা সফিয়া মমতাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, জনার কেওচিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মির্জাখীল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইছামতি এয়াকুব মরিয়ম উচ্চ বিদ্যালয়, জনকল্যাণ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, দেওদীঘি কে এম উচ্চ বিদ্যালয়, ছমদর পাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কেওচিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, এওচিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বারদোনা মাহ মজিদিয়া মৌলা. আ. বারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
তবে এ প্লাস না পেলেও উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটির পারফর্মেন্স দুর্দান্ত। রেজাল্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লায়লা মছউদ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের হার ৯৬ দশমিক ৩০ শতাংশ, গাটিয়াডেঙ্গা সফিয়া মমতাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের হার ৯৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। একইভাবে ৮০ শতাংশের ওপরে পাশের হার রয়েছে পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, জনার কেওচিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাখীল আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের।
আরও পড়ুন পাশের হার বেড়েছে চট্টগ্রামে
শিক্ষাবিদদের মতে, বর্তমানে যে সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়েছে, তাতে পাশ করা আর এ প্লাস অর্জনের পড়াশুনাতে খানিকটা ভিন্নতা রয়েছে। যেসব শিক্ষকেরা বর্তমানে পাঠদান করছেন তাদের অধিকাংশ পুরানো কারিক্যুলামের, যদিও তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত; তবে জিপিএ ফাইভ অর্জন করতে হলে প্রতিটি সাবজেক্টে সমান দখল থাকতে হবে এবং সৃজনশীলতা রপ্ত করে পড়াশুনায় কৌশলী হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘কয়েকবছর পর এবার ২০২৪ সালে পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে জিপিএ ফাইভ কমার এটি একটি কারণ হতে পারে। আর শিক্ষার্থী কমার কারণ হতে পারে অন্য মাধ্যমে ডাইভার্ট।অর্থাৎ মাদ্রাসা কিংবা কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ছে। এসব বিষয়ে আলোচনা করতে আগামি ২১ মে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে একটি সভার আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে উপজেলার শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ করা হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় এবার সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী ছিলো শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ২৬৮ জন এসএসসি পরীক্ষায় বসেছিলো। যারমধ্যে ২২৫ জন পাশ করেছে এবং এ প্লাস পেয়েছে ৪ জন। এরপর বেশি পরীক্ষার্থী ২৫২ জন ছিলো উত্তর সাতকানিয়া আরী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ের। সে বিদ্যাপীঠের পাশের হার ৭২ দশমিক ৬২ শতাংশ, আর জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৪জন। এভাবে শিক্ষার্থীর সংখ্যার আধিক্যে এগিয়ে ধারাবাহিকভাবে খাগরিয়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ২১৪, সাতকানিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৭, বাজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৭৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উপজেলাটিতে এখনও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো থেকে বোর্ড পরীক্ষায় সরাসরি অংশ নেয়ার অনুমোদন নেই, তাই নিকটবর্তী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ওইসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসে থাকেন।
সাতকানিয়া উপজেলায় সেরা ১০ স্কুল
শতভাগ পাশের হার এবং ২৬ শিক্ষার্থীর জিপিএ ফাইভ অর্জনের মাধ্যমে এ উপজেলায় শীর্ষে অবস্থান করছে বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল। ক্রমান্বয়ে বাকিগুলো হলো, ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-২), খাগরিয়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-১৯), লায়লা মছউদ উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-০), গাটিয়াডেঙ্গা সফিয়া মমতাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-০), চিববাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-৩), পশ্চিম ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-২), করইয়ানগর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-১০), আমিলাইশ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (জিপিএ৫-১), আমিলাইষ কাঞ্চনা বঙ্গ চন্দ্র ঘোষ ইনষ্টিটিউট (জিপিএ৫-২)।
এবার ভোকেশনাল পরীক্ষার্থী হিসাবে এ উপজেলার চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১১৯ জন অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে সাতকানিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ প্লাস পেয়েছেন ৩ জন শিক্ষার্থী, পাশের হার ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ছদাহা কেঁওচিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের হার ৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সাতকানিয়া সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৮৪ শতাংশ, মির্জাখীল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের ৮০ শতাংশ।
Leave a Reply