মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশঃ
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভায় ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত ২৫ ফুট চওড়া এবং প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক বেদখল হতে হতে এখন আইলে রূপান্তরিত হয়ে দোহাজারী পৌরসভার মানচিত্র থেকে বিলুপ্তির পথে। দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে বড়ুয়াপাড়া, সাতছড়ি, ময়নার বাপের পাহাড় হয়ে হিমছড়ি পর্যন্ত দোহাজারী পৌরসভার ৭ এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর-দক্ষিণের সীমানা নির্ধারণী সড়কটি স্থানীয়দের কাছে 'মোটর রাস্তা' হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এই কাঁচা সড়কটি পাকা করার ব্যাপারে জনগণের দাবি ছিলো। সড়কটি পুনরুদ্ধার করে পুনরায় জনচলাচল ও যানচলাচলের উপযোগী করার জন্য ২০২২সালের ২২মে চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ সদস্য ও দোহাজারী পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রাজিয়া সুলতানা রাজু তৎকালীন পৌর প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন পৌর প্রশাসক নাছরীন আক্তার সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দিলেও বিষয়টির আর অগ্রগতি হয়নি।
জানা যায়, ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ও জাপানের মধ্যে সংঘটিত দেশ দখলের যুদ্ধে ব্রিটিশ সৈণ্যগণ নিরাপত্তা জনিত কারনে জনবহুল এলাকা এড়িয়ে কমসংখ্যক মানুষ চলাফেরা করেন এমন এলাকায় ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। তারই প্রেক্ষিতে দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে হিমছড়ি এলাকায় গহীন পাহাড়ে ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা। যুদ্ধকালীন সময়ে ওই ক্যাম্পে অবস্থান করে ব্রিটিশ সৈণ্যরা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ব্রিটিশ সৈণ্যদের যুদ্ধাস্ত্র, রসদসহ প্রয়োজনীয় মালামাল ওই ক্যাম্পে আনা-নেওয়ার জন্য দোহাজারী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ২৫ ফুট চওড়া এবং প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণ করা হয়। সাতছড়ি খালের ওপর একটি কংক্রিটের সেতুও নির্মাণ করা হয়। যুদ্ধকালীন সময়ে সড়কটি দিয়ে ব্রিটিশ সৈণ্যদের যুদ্ধযানের পাশাপাশি রসদবাহী বড় বড় ট্রাক চলাচল করলেও যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ক্যাম্পটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এরপর 'মোটর রাস্তা' দিয়ে সৈণ্যদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও এলাকার লোকজন চলাচল করার পাশাপাশি কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল আনা-নেওয়ার জন্য সড়কটি ব্যবহার করতেন। বিলুপ্ত দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদ সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটির কোন রেকর্ড সংরক্ষণ না করার ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এখন বিলুপ্তির পথে।
দোহাজারী ভূমি অফিসে গিয়ে সড়কটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, জামিজুরী মৌজায় বিএস খতিয়ানে (নং ৬) ৯৯২৩ দাগে ৩৯ শতক এবং ৯৮৭৮, ৯৯৮০ দাগে ২৭ শতকসহ মোট ৬৬ শতক জমি সড়ক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা যায় সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের মধ্যে দুই কিলোমিটারের চিহ্ন থাকলেও প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক প্রায় নিশ্চিহ্ন। সড়কের দুই পাশের জমির মালিকরা আইল বাড়াতে বাড়াতে সড়কটি সংকুচিত করে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছেন। ২৫ ফুট চওড়া সড়কটির কোন কোন স্থানে বর্তমানে ১ থেকে দেড় ফুট, কোন কোন স্থানে ৫ থেকে ৭ ফুট অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। কোথাও আবার সড়কের ওপরেই ফসল চাষাবাদ করা হয়েছে। সাতছড়ি খালের ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেই সেতুটি না থাকলেও খালের দুই পাড়ে সেতুর ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। এক সময় যে সড়কটি দিয়ে ব্রিটিশ সৈণ্যদের বড় বড় ট্রাক চলাচল করতো এখন সেটি জমির আইলে রুপান্তরিত হয়ে দোহাজারীর মানচিত্র থেকে বিলুপ্তির পথে।
সড়কটি পুনরুদ্ধার করে জনচলাচলের জন্য উম্মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দোহাজারী পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ লোকমান হাকিমের সদয় সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, "তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে বেদখল হওয়া সড়কটি পুনরুদ্ধার করে দ্রুততম সময়ে সংস্কার করে জনচলাচল ও যানচলাচল উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করবো।"
দোহাজারী পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, "সড়কটি যদি সিটে থাকে তাহলে দ্রুততম সময়ে পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করা হবে।"