অনলাইন ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জীবাশ্ম নির্ভরতা কমিয়ে নবায়িত জ্বালানি উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে চাইছে রাষ্ট্র পরিচালনাকারী ক্ষমতাসীন সরকার। এজন্য গৃহীত হয়েছে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’।
এই পরিকল্পনায় ১১টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে তৃতীয়টি হলো শিল্প ও শক্তি। শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এবং শিল্পোৎপাদনে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ নিশ্চিত জরুরি। এজন্য বিভিন্ন নবায়িত খাত থেকে জ্বালানী উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ম্যানগ্রোভ ব্যাল্টে নবায়িত জ্বালানী শক্তি উৎপাদনে নেওয়া হচ্ছে মুজিব বঙ্গোপসাগর ইনডিপেন্ডেন্স গিগা অ্যারে।
এছাড়া স্ট্র্যাটেজিক মুজিব এনার্জি হাবস: অর্থাৎ কয়লা তেল, ডিজেলের পাশাপাশি বর্জ্য থেকেও জ্বালানী উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু অভিযোজনের এই পরিকল্পনায় দেশের কৃষিখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। কারন ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে কৃষিখাতে বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা ৪৬ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি প্ল্যানিং অনুসারে মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় আরও রয়েছে- প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা: জল, উপসাগর বাংলার, জীববৈচিত্র্য এবং মাটি; খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করন; শিল্প ও শক্তি; স্বাস্থ্য; জেন্ডার এবং সামাজিক নিরাপত্তা; আঞ্চলিক এবং নগরীর জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা; ব্যাপক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা; অবকাঠামো উন্নয়ন; কার্বন নিঃস্বরণ হ্রাস এবং প্রশমন; গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা; শাসন: আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং নীতিগত দিক।
আরও পড়ুন এশিয়ার নবায়িত জ্বালানী খাতে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ইউরোপ
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও জলবায়ু সম্পৃক্ত ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য ৩৭ হাজার ৫১ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্যারিস চুক্তি অনুসারে, এ বিষয়ে বিশে^র লিডিং দেশগুলোর মতো মোকাবেলায় বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চায়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যার প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে যদি প্রশমনের (মিটিগেশন) ব্যবস্থা না বাড়ানো হয় তাহলে আমরা ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপির ২ শতাংশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে ৯ শতাংশ হারাব। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেয়া অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করছি এবং নিজেদের প্রশ্ন করছি যে কীভাবে আমরা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সমৃদ্ধির দিকে যেতে পারি। আমরা চাই না যে সবকিছুই ক্ষতির মুখোমুখি পড়ুক। এই কারণেই এই পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট সবকিছুই রাখা হয়েছে, যেমন: এটি অভিযোজন, প্রশমন এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ। লস অ্যান্ড ড্যামেজ মোকাবিলা বা অভিযোজন কিংবা প্রশমনের দিকগুলো মোকাবিলার জন্য আমরা আমাদের স্থানীয় ধারণা ব্যবহার করব এবং এগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিগুলো এতে যুক্ত করব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫), ভিশন ২০৪১ এবং জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলপত্র ও কর্ম পরিকল্পনার সাথে সমন্নয়কৃত বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ যুক্ত হবে। যদিও এর আগে এসব পরিকল্পনায় সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত স্বল্পোন্নত দেশ উন্নত বিশে^র দেশে পরিণত হওয়ার প্রয়াস ছিলো।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন খাত থেকে নবায়িত জ¦ালানী শক্তি উৎপাদন করতে বিনিয়োগ হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা ‘দ্য ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)’ লিমিটেড সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ফেনীর সোনাগাজীতে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাপানি ব্যবসায়িক সংস্থা মারুবেনি কর্পোরেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগ চুক্তি (জেভিএ) স্বাক্ষর হয়েছে। সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিজিপি) এই ১শ’ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শুল্ক অনুমোদন করেছে।
সিসিজিপির অনুমোদন অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ২০ বছরের মেয়াদে এই সৌর বিদ্যুৎ থেকে প্রতি ইউনিট ১০ দশমিক ৯ মার্কিন ডলারে বিদ্যুৎ কিনবে। শিগগিরই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে, ইসিজিবি একই এলাকায় সিঙ্গাপুর ভিত্তিক কোম্পানি ‘হিরো ফিউচার এনার্জিস এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ এর সাথে আরও একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে।
ইজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন বলেন, ‘ইজিসিবি তার নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে এবং সরকারের বিভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখার জন্য তার জেনারেশন পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনার পরিকল্পনা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলো বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে আরও অবদান রাখবে।’