অর্থনৈতিক সংকটের মুখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হওয়া বাংলাদেশের জন্য এবারই প্রথম নয়। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ, যার অংক সাড়ে চারশো কোটি ডলার। এ ঋণ নিয়ে এখন আইএমএফ এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।
গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে আইএমএফ বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে নেবার জন্য।বাংলাদেশের এর আগে আইএমএফ'র কাছে ঋণ চেয়েছিল ১০ বার। প্রথমবার ঋণ নিয়েছিল ১৯৭৪ সালে। আইএমএফ এর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঋণের জন্য সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গিয়েছে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সালে। এই ১০ বছরে বাংলাদেশ আইএমএফ এর কাছ থেকে পাঁচ বার অর্থ ধার করেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে অর্থনৈতিক অবস্থা যেহেতু ভালো ছিলনা সেজন্য বিভিন্ন সময় ঋণ চাইতে হয়েছিল। তাছাড়া ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দেশটিতে সামরিক শাসন থাকায় তেমন কোন অর্থনৈতিক সংস্কারও হয়নি। ফলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই আইএমএফ এর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য সরকার এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। অতীতেও ঋণ দেবার সময় ভর্তুকি তুলে নেয়া এবং নানা ধরণের সংস্কারের শর্ত বাংলাদেশকে মানতে হয়েছিল।
এর আগে বাংলাদেশ আইএমএফ'র কাছে ১০ বার ঋণ চেয়েছিল। প্রথমবার ঋণ নিয়েছিল ১৯৭৪ সালে। আইএমএফ এর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঋণের জন্য সংস্থাটির কাছে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গিয়েছে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সালে। এই ১০ বছরে বাংলাদেশ আইএমএফ এর কাছ থেকে পাঁচ বার অর্থ ধার করেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে অর্থনৈতিক অবস্থা যেহেতু ভালো ছিলনা সেজন্য বিভিন্ন সময় ঋণ চাইতে হয়েছিল। তাছাড়া ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দেশটিতে সামরিক শাসন থাকায় তেমন কোন অর্থনৈতিক সংস্কারও হয়নি। ফলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই আইএমএফ এর দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ যখনই বাংলাদেশকে কোন ঋণ দিয়েছে তখনই তারা কিছু শর্ত বা পরামর্শ দিয়েছে। এসব শর্তের কিছু বাংলাদেশে মেনে নিয়েছে আবার কিছু মেনে নেয়নি।
ঋণের ক্ষেত্রে ১৯৯০ সালে আইএমএফ এর বেশ কয়েকটি শর্ত ছিল। সেসব শর্তের আলোকে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর চালু করা হয়। এছাড়া বাণিজ্য উদারীকরণ, ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের শর্তও এসেছিল। এসব প্রক্রিয়ার সাথে বিশ্বব্যাংকও জড়িত ছিল।
বাংলাদেশে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছিল ১৯৯০ এর দশকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের আমদানি পরিস্থিতির উন্নতি হয় এবং রপ্তানি বাণিজ্যেও সেটির ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওইসময় আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি করার সক্ষমতা সম্ভব হয়েছে। বাণিজ্য উদারীকরণে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর পর বাংলাদেশে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগও এসেছিল। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তিও ব্যাপকভাবে যাওয়া শুরু হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার তেমন একটা ঘাটতি ছিলনা ।
এসব কারণে ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশের ঋণ সহায়তার প্রয়োজন ছিল না। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আইএমএফ এর কাছ থেকে কোন ঋণ নেয়নি। এরপর বাংলাদেশ আবার আইএমএফ'র কাছে থেকে ঋণ নেয় ২০০৩ সালে। সেবার বড় শর্ত ছিল, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান কমিয়ে আনতে হবে। আইএমএফ ও বিশ্ব্যাংকের শর্ত মেনে বাংলাদেশে লোকশানের মুখে থাকা পাটকল বন্ধ করা হয়েছিল।
তখন আইএমএফ এর শর্ত মেনে আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। এনিয়ে তখন তীব্র বিতর্ক হলেও অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সে সময় আদমজী জুটমিল বন্ধের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ছিল। "আদমজী জুট মিলের জায়গায় এখন আদমজী ইপিজেড হয়েছে। সেখান থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছেন এবং সে পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে সেটি আমাদের অনুমান আদমজী জুট মিল থেকে পাওয়া যেত না," বলেন মি. মোয়াজ্জেম।
সর্বশেষ ঋণ নিয়েছিল ২০১২ সালে যার পরিমাণ ছিল প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে ট্যাক্স পলিসির ক্ষেত্রে কিছু সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। সে সময় নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হার এবং সুদের হার নির্দিষ্ট করে তা কৃত্রিমভাবে ধরে না রেখে বাজারের উপর ছেড়ে দেবার পরামর্শ দিয়েছিল আইএমএফ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি