#বাড়ছে চোরাই কাঠের বাজার
#চলছে চাঁদাবাজি
#উজাড় হচ্ছে বন
মো. শোয়াইব, হাটহাজারীঃ উপজেলায় আইন অমান্য করে
চলছে অসংখ্য করাতকল। এসব অবৈধ কারখানার কারনে অবাধে কাটা হচ্ছে বনজ ও ফলদসহ নানা প্রজাতির গাছ। এতে সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। কেবল তাই নয়, সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বিভিন্ন সরকারি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে ওঠেছে এসব মিল বা করাতকল। যার ফলে শব্দদূষণের কারনে শিক্ষার্থীরাও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগসহ সরকারী একাধিক সংস্থার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চলছে এসব কারখানা। এ ধরনের করাতকলগুলোতে গাছের যোগান দিতে প্রতিবছর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কোটি টাকার গাছ কাটা হয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধে সদিচ্ছা নেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করাতকল লাইসেন্স বিধিমালা-২০১২ অনুযায়ী; এসব স্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পালন করতে হয়। আইনানুযায়ী- সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোনো ধরনের সরকারি বন ভূমির সীমানা থেকে ন্যূনতম দশ কিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের কোনো কারখানা স্থাপন করা যাবে না। এছাড়া কোনো সরকারি অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নূন্যতম দু’শ মিটারের মধ্যে এ ধরনের কারখানা স্থাপন আইনত দণ্ডনীয়। তবে আইনটির শর্তানুযায়ী এই বিধি প্রণয়নের প্রাক্কালে যেসব করাতকল স্থাপিত ও পরিচালনাধীন ছিলো তা নব্বই দিনের মধ্যে বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ২০১২ সালে আইনটি পাস হওয়ার পর এসব কারখানা বন্ধ হওয়া দূরে থাক বরং নতুন করে আরো খুলেছে।
আরও পড়ুন হাটহাজারী পৌরসভায় কেন গচ্ছা যাচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বরাদ্দ
করাতকলের আইনটিতে আরও কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে যা হরহামেশা লঙ্ঘিত হচ্ছে। যেমন, এ ধরনের কারখানা সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার পূর্বে বা পরে পরিচালনা করা যাবে না। আইনানুযায়ী কোনো কারখানা এই বিধান লংঘন করলে অর্থ এবং কারাদণ্ড উভয়টিতে দণ্ডিত হতে হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন বিভাগের রেঞ্জ অফিস ও বিট অফিসের নাকের ডগায় নাজিরহাট কলেজ থেকে নতুন রাস্তার মাথা পর্যন্ত ১৬টি, নুরালী মিয়ারহাটে ৪টি, কাটিরহাটে ৬টি, মনিয়াপুকুরপাড়ে ৫টি, বালুর ঢাল ১টি, সরকারহাট ৪টি, মুহুরীহাট বটতল ২টি, কলঘর ১টি, চারিয়া মাদ্রাসা ২টি, হাটহাজারী পৌর সদর এলাকায় ১২টি, ছড়ারকুল ২টি, ফতেয়াবাদ মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ৩টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক নাম্বার গেইটে ২টিসহ মোট ৬২টি করাতকল রয়েছে। এ কারখানাগুলোতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চোরাই কাঠ প্রক্রিয়াকরণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গত ২৭ জানুয়ারী উপজেলার ধলই ও ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে দুটি করাতকলের মালামাল জব্দ করে বনবিভাগ। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন, রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম এবং স্টেশন কর্মকর্তা রাজীব উদ্দিন ইব্রাহীম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে করাতকলের একাধিক সত্ত্বাধিকারী চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি করাতকলে অভিযান চালানোর দুটো কারনের একটি হলো প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের আগে প্রতিটি করাতকল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তাদেরকে দিতে হয়, যার কোনো রশিদ নেই। এই নির্দিষ্ট সময়ে টাকা দিতে না পারলে কয়েকটিতে অভিযান চালানো শুরু হয়। তারপর দ্বিতীয়টি হলো, কয়েকটি করাতকলে অভিযান পরিচালনা করা মানে বাকীদের জানান দেয়া; যাতে টাকা দ্রুত পরিশোধ করা হয়।’
হাটহাজারীতে সরকারি অনুমোদিত কতটি করাতকল রয়েছে তা জানতে চাইলে রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম এবং ১১ মাইল স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) রাজীব উদ্দিন ইব্রাহীম এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।
চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আসলে কতটা করাতকল আছে সেটা আমার কাছে মুখস্থ নেই। তবে অবৈধ করাতকলে অভিযান করার জন্য ইউএনও এবং ওসি সাহেবকে কতবার বলেছি এবং কতবার গেছি তার কোনো হিসাব নেই। এরপরও তাদের কোনো সহযোগিতা পায়নি। তাই অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।’ কিন্তু ইউএনও এবং ওসি ছাড়া কীভাবে রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং এসও মিলে ধলই এবং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের দুইটি করাতকলে অভিযান চালিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি এই অভিযানের বিষয়ে কিছুই জানি না।’
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, ‘করাতকলের সঠিক তথ্য বনবিভাগের কাছে থাকে। তারপরও আমি বিষয়টি দেখছি।’ ধলই এবং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের করাতকলগুলোতে অভিযানের বিষয়ে অবগত নন বলেও জানিয়েছেন তিনি।