আজ ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

‘এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ফ্লু ভাইরাসের প্রকোপ’


অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। ফলে এ সময়টাকে গবেষকরা ফ্লু ভাইরাসের মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট নিতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর মহাখালীর আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআর,বি এর গবেষকরা যৌথভাবে এ সার্ভেইল্যান্স পরিচালনা করেন। সেমিনারে ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত দেশব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইউএস-সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরী সহায়তায় বাংলাদেশে এই সার্ভেইল্যান্স পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের ১৯ হাসপাতালে চলমান এই সার্ভেইল্যান্সের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৌসুমি বৈচিত্র্য বুঝার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন শনাক্ত করা।

সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এসময় তিনি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমি বৈচিত্র্য তুলে ধরার পাশাপাশি ফ্লু টিকা দেওয়ার সঠিক সময়ের বিষয়ে ধারণা দেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ তাদের ফ্লু মৌসুমের আগে ফ্লু ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সারভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশি নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশের ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এছাড়াও, হাসপাতালে ভর্তি ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে প্রতি একশ জনে একজন হাসপাতালেই মারা যান। তবে, ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি।

তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে বাংলাদেশে সারাবছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে। তবে প্রতিবছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লু শনাক্তের হার বাড়ে এবং জুন থেকে জুলাই মাসে এর প্রকোপ সর্বোচ্চ হয়। এ কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন ভাইরাস জ্বর ভেবে অবহেলা নয়

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইনফ্লুয়েঞ্জার মহামারি সম্ভাবনা এবং এন্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার প্রতিরোধে জোর দেন। তিনি বলেন, চলমান এই ফ্লুর মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে এন্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচারগুলো সারাবছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয় অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারবো।

আইসিডিডিআর,বি এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআর,বি এর বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩ শতাংশ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এ গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মায়েদের ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার ড. এএসএম আলমগীর, ইউএস-সিডিসির এপিডেমিওলজিস্ট ড. গ্রেচেন কাওম্যান, গ্লোবাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট (জিএইচডি) এবং ইস্টার্ন মেডিটার্নিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান।

তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ২৪ডটকম


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর