আজ ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে চূড়ান্ত রোডম্যাপ


অনলাইন ডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ রোডম্যাপের আওতায় বিদেশী কোম্পানিগুলোর দরপত্রে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া, দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, রোড শোসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। চলতি মাসে অর্ধশতাধিক বিদেশি কোম্পানির এ বিষয়ে দরপত্র উত্থাপনের কথা রয়েছে।

দেশের জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমার ইতোমধ্যে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে বড় সাফল্যের দেখা পেয়েছে। যদিও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও মনোযোগ না পাওয়ায় বাংলাদেশের এ অনুসন্ধান কার্যক্রম তেমন একটা এগোয়নি। নতুন এ দরপত্রের মধ্য দিয়ে সে অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন এশিয়ার নবায়িত জ্বালানী খাতে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে ইউরোপ

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশে বিরাট এলাকাজুড়ে টুডি সিসমিক সার্ভে করা হয়েছে। জার্মানির কোম্পানি স্লামবার্জার দুই বছর আগে এ জরিপকাজ করেছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে স্লামবার্জারের করা এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এরই মধ্যে মার্কিন কোম্পানি শেভরন কিনে নিয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে এবং ব্লক বরাদ্দ নিতে শেভরণও দরপত্র উত্থাপন করবে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য গভীর সমুদ্রে বিনা দরপত্রে ১৫টি ব্লকে কাজ চেয়েছিলো মার্কিন জ্বালানি খাতের জায়ান্ট এক্সনমোবিল। গত বছরের মার্চে কোম্পানিটি এ বিষয়ে দুই দফায় প্রস্তাব দিয়েছিলো। পেট্রোবাংলাকে এ নিয়ে কোম্পানিটির পক্ষে চিঠিও দেয়া হয়। এর মধ্যে গত বছরের ১৬ জুলাই দেয়া চিঠিতে কোম্পানিটি গভীর সমুদ্রে ২৫ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগেরও কথা জানায়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গেও এক্সনমোবিলের আলোচনা হয়। সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পেতে ঢাকায় আসে এক্সনমোবিলের একটি প্রতিনিধি দল। সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব ও পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন তারা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এক্সনমোবিলের সে প্রস্তাব নাকচ করে কোম্পানিটিকে আসন্ন দরপত্রে অংশ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে মার্কিন কোম্পানিটি দরপত্রে অংশ নেবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।

বঙ্গোপসাগরে গভীর-অগভীর সমুদ্রে মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। এরমধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক রয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান চালানোর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল পেট্রোবাংলা। সেই দরপত্রে নয়টি ব্লকের জন্য বিদেশী কোম্পানিগুলো কাজ করার আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত তিনটি ব্লক ইজারা নিয়েছিলো আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানি ওএনজিসি এসএস ৪ ও ৯ নম্বর ব্লক ইজারা নিয়েছিলো। আর অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান সান্তোস ইজারা নিয়েছিলো ১১ নম্বর ব্লক। তবে সে প্রক্রিয়া থেকে ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় মিয়ানমারের। এরপর ২০১৩ সালে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে দেশটি। এরপর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হয় ২০১৪ সালে। এরই মধ্যে এ নিষ্পত্তিরও ১০ বছর পেরিয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে কোনো সাফল্যেরই দেখা পায়নি বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, সীমানা নিষ্পত্তির পর গভীর সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানে মনোযোগ বাড়িয়েছে মিয়ানমার ও ভারত। বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। ফলে প্রয়োজনমতো বিদেশী বিনিয়োগও পেয়েছে। আর বাংলাদেশ সময়ক্ষেপণ করেছে আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নে।

তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর