আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবি: মাদার্শা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বন্যার পানিতে মারা গেছে পোল্ট্রি ফার্মের মুরগি

সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পাবেন কৃষক


#প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য আলাদা নীতিমালার দাবি
#বিনা সুদে ঋণ অনুমোদনের প্রস্তাব
#ঋণ মিলবে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের কৃষকেরা। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বান্দরবান, কক্সবাজার, চকরিয়ায় কৃষিতে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন লক্ষাধিক কৃষক। কারও নষ্ট হয়েছে জমির ফসল, কারও মরেছে গবাদি পশু, কারও ভেসেছে মাছের প্রজেক্ট। জেলায় কৃষিতে ক্ষতি ২শ’ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ হাজার হেক্টর আমন ফসল, ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর আউশ ফসল, ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর আমনের বীজতলা এবং ৫ হাজার ১০০ হেক্টর সবজির আবাদ। কিন্তু এরপরও কী থেমে থাকবে কৃষক, থেমে থাকবে এ অঞ্চলের খাদ্য উৎপাদন? এরই মধ্যে সরকারি বেসরকারি পর্যায় থেকে এ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য এসেছে সহায়তা। যদিও সে সহায়তা একবারেই অপ্রতুল।
সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের কৃষক সজল দে বলেন, ‘আমি আউশ ধান করেছি ১ কানি (২০গন্ডা)। সেগুলো পচে গেলো। ২০ কেজি ধানের বীজ তলা করেছিলাম, যা আড়াই কানি (২৫গন্ডা) জমির চাষ করা যেত। বন্যার পানি উঠে সেগুলোও শেষ হয়ে গেলো। পেঁপে ক্ষেত নষ্ট হয়েছে আমার ২ গন্ডা জমির আমার অন্তত ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

কৃষকের এ দুরাবস্থা বিবেচনা করে চলতি বছর দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ঋণপ্রদানে আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব রাখতে চায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। প্রস্তাবে থাকছে বিনাসুদে ঋণ প্রদানের বিষয়টিও। এজন্য কোন কৃষকের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তৈরি করা হচ্ছে একটি তালিকা। তালিকাটি সমন্বয় সভার মাধ্যমে স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

শনিবার (১২ আগস্ট) সাতকানিয়া, দোহাজারী, লোহাগাড়া অঞ্চল ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদরে দুর্দশা দেখে এ কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম অঞ্চল) অতিরিক্ত পরিচালক অরবিন্দু কুমার রায়।
চাটগাঁর সংবাদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত যে কয়টি উপজেলা ভিসিট করেছি, তাতে বলা যায়, এবছর দক্ষিণ চট্টগ্রামের কৃষিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। পূনর্বাসন, প্রণোদনা, সহায়তা যাই দেয়া হোক না কেন সেটা কৃষকের জন্য পর্যাপ্ত হবে না।’

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘সব কৃষকের ক্ষতি কিন্তু একরকম না। কারও বেশি ক্ষতি হয়েছে, কারও কম। সেজন্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের একটি তালিকা আমরা তৈরি করব। পরে একটি সমন্বয় সভার মাধ্যমে স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করব। যেসব কৃষক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, তারা যাতে বিনা সুদে ঋণ পান সেজন্য প্রস্তাব রাখা হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কী স্বিদ্ধান্ত আসবে তা আমরা এখনও জানিনা।’

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদানের স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের পক্ষে নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা ক‌রেন বাংলা‌দেশ ব্যাং‌কের ডেপু‌টি গভর্নর এ কে এম সা‌জেদুর রহমান খান। এসময় উপ‌স্থিত ছি‌লেন বিভাগের প‌রিচালক কা‌নিজ ফা‌তেমা, দেবাশীষ সরকারসহ বি‌ভিন্ন বা‌ণি‌জ্যিক ব্যাং‌কের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা প‌রিচালকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাং‌কের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতর‌ণের লক্ষ্য ঠিক ক‌রা হয়ে‌ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা কৃষি এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক এক হাজার ৪৭ কো‌টি টাকা পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বেশ‌কিছু বিষয় যুক্ত করা হ‌য়েছে।

যেভাবে পাওয়া যাবে ঋণ: কৃষি ও পল্লী ঋণের আবেদনকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের ভিত্তিতে প্রকৃত কৃষক শনাক্ত করা হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কিন্তু কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড নেই সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা স্থানীয় স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক অথবা ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির দেয়া প্রত্যয়নপত্রও প্রকৃত কৃষক শনাক্তকরণের কাজে ব্যবহার করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, ৫ একর বা ১৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। সে জন্য তাঁদের জমির দলিল বন্ধক রাখতে হবে। যাঁদের জমি নেই, তাঁরাও এই ঋণ পাবেন, তবে সে ক্ষেত্রে কৃষককে যাঁর জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন, সেই ভাড়ার চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর