অনলাইন ডেস্ক
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা অত্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করা হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।এ জন্য আমরা এ পূজাকে চ্যালেঞ্জ মনে করছি না, আমরা একটি ফেস্টিভ মুডে আছি।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকালে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা যারা কোর কমিটিতে আছি, আমরা চাই আপনাদের সঙ্গে সমান তালে আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গাপূজা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হোক। শারদীয় দুর্গাপূজা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তাই আমরা অনেক সাবধানে থাকবো, সতর্ক থাকবো। আমাদের একটি চমৎকার টিম রয়েছে। দুর্গাপূজা ঘিরে কোথাও ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে বা ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ালে তা আমাদের জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে আজকের মধ্যেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। পূজা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে অবহিত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পূজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। পূজার ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পূজা চলাকালীন শুধু আজান ও নামাজের সময় উচ্চৈঃস্বরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় টহল দেবে। পূজায় বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর রাখতে হবে। নারী-পুরুষ যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পূজামণ্ডপে যাতায়াত করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সবার মাঝে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সভায় জেলা পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, সর্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজার সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক। এ ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজড। কারণ সিসি ক্যামেরা সচল থাকলে যেকোন ধরনের অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব। প্রতিটি মণ্ডপে রেজিস্ট্রার খাতা রাখতে হবে, যাতে পূজায় আগতরা তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে পারে।
তিনি বলেন, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হবে। সর্বজনীন এ উৎসব যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কোনো ভয় নেই। উপকূলীয় এলাকাগুলোর পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড নিয়োজিত থাকবে।
শুরু থেকে পূজা মণ্ডপগুলোর সার্বিক অবস্থা কী তা জানাতে প্রতিটি থানার অফিসার ইনচার্জদের এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।
এসপি বলেন, পূজা মণ্ডপ ও পূজায় আসা দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পূজামণ্ডপ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হবে। আশাকরি পূজা উদযাপন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে সাংবাদিকদের প্রকৃত তথ্য দিলে তারা বস্তুুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই চট্টগ্রাম জেলার সর্বত্র সর্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) একেএম গোলাম মোর্শেদ খান জানান, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় এবার ২ হাজার ৪৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে মহানগরে ২৯৩টি ও জেলার ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) একেএম গোলাম মোর্শেদের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন, ডিজিএফআইর উপ-পরিচারক কাজী রাজীব রুবায়েত, এনএসআইর যুগ্ম পরিচালক শাহ সুফি নুর নবী সরকার, এনএসআইর মেট্রোর উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন গালিব, ১০ পদাতিক ডিভিশনের প্রতিনিধি মেজর ইখতিয়ার উদ্দীন, নৌ অঞ্চলের কমান্ডার এসএম জাহিদ হোসেন, বিজিবির সহকারী পরিচালক মফিজুল ইসলাম, কোস্টগার্ড কমান্ডার মো. জাহিদ, আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মো. আবু সোলায়মান, সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপস্) বাবুল চন্দ্র বণিক, র্যাবের এএসপি মো. ইকবাল, পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিতাই প্রসাদ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নটু কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক নিখিল কুমার নাথ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ রঞ্জন দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক রুবেল দে প্রমুখ।
Leave a Reply