আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

যেসব কারণে বাঙালির কাছে স্মরণীয় আজ ২৬ জুলাই


চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক: আজ ২৬ জুলাই ২০২৩। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ২০৭তম (অধিবর্ষে ২০৮তম) দিন। ফেলে আসা ইতিহাসের এই দিনটি আজও বেশ কয়েকটি কারণে বাঙালির কাছে স্মরণীয়। পাঠক আসুন জেনে নেয়া যাক সেইসব ঘটনা।

দ্য হিন্দু উইডো’স রিম্যারেজ অ্যাক্ট:  ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিলো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীন সময়ে তখনকার ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় ভারতবর্ষের সকল বিচারব্যবস্থায় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ বৈধ করা হয়েছিলো। তবে সমাজ সংস্কারের এ কৃতিত্বের দাবিদার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং আইন প্রণয়ন করে বিধবা বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেন। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং সতীদাহ প্রথা বাজেয়াপ্ত করার পর এটি ছিলো সমাজ সংস্কারের আরেকটি যুগোপযুগি আইন।

ভারতসভা: ১৮৭৬ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন অবিভক্ত বাঙলার কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তাঁর বন্ধু আনন্দমোহন বসু ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘ভারতসভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিলো ব্রিটিশ ভারতে প্রথম প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সংস্থা। এই সমিতিরি উদ্দেশ্য ছিল ‘বৈধ উপায়ে জনগণের রাজনৈতিক, বৌদ্ধিক এবং বৈষয়িক অগ্রগতি’ প্রচার করা। ভারত সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন রেভারেন্ড কৃষ্ণ মোহন বন্দোপাধ্যায় । এটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে মিশে যায়।

জন্মদিন: আজ বেশ কজন কীর্তিমান ও গুণী বাঙালির জন্মদিন। চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই তাঁদের সম্পর্কেও-

রজনীকান্ত সেন: অবিভক্ত বাঙলায় ১৮৬৫ সালে এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। বাঙালি এই কবি, গীতিকার এবং সুরকার শিক্ষা-সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি “কান্তকবি” নামেও পরিচিত। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সমসাময়িক এই গীতিকারের গানগুলো খুবই জনপ্রিয়। ঈশ্বরের আরাধনায় ভক্তিমূলক ও দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ বা স্বদেশ প্রেমই তাঁর গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয়। বঙ্গভঙ্গ আদেশ রদের জন্য ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে যে স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রপাত হয় সেই সময় কান্ত কবি রচনা করলেন বিখ্যাত গান ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই’। তাঁর বিখ্যাত দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘বাণী’ এবং ‘কল্যাণী’। ১৯১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।

মালতী চৌধুরী: ১৯০৪ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন অবিভক্ত বাঙলার কলকাতায় একটি সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মপরিবারে তিনি জন্মেছিলেন। সমাজসেবী এই নারী নেত্রী
মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তিনি দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী হরিজন ছেলেমেয়েদের সেবাকার্যে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি সাহিত্য পুরস্কার, দেশিকোত্তম, শিশু কল্যাণমূলক কাজে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালের ১৫ মার্চ ৯৩ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

খালেদ মাহমুদ সুজন: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ও অন্যতম এই খেলোয়াড় ১৯৭১ সালের এই দিনে জন্ম নিয়েছিলেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলেছেন এবং ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর ক্রিকেটীয় অলরাউন্ডার দক্ষতার জন্য, তিনি তাঁর সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাদের অন্যতম হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রযুক্তি পরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অন্যতম পরিচালক তিনি।

চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়: ১৯৩০ সালের এই দিনে তৎকালীন অবিভক্ত বাঙলার উত্তর ২৪ পরগণা জেলার পানিহাটিতে এই বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীর জন্ম। মূলত তিনি ছিলেন একজন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। তাঁর গানের স্টাইল ছিল অনন্য। রবীন্দ্রসঙ্গীতে রাবীন্দ্রিক ভাব, গায়কী, স্পষ্ট উচ্চারণ এবং স্বরলিপির নিখুঁত ব্যবহারের জন্য তিনি অনন্য। ১৯৮৭ সালে লিভারে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় মাত্র ৫৬ বছর বয়সে প্রাণত্যাগ করেন।

আজ ২৬ জুলাই উপরোল্লেখিত কীর্তিমান কিংবদন্তীদের জন্মদিনের কারণে যেমন স্মরণীয় তেমনি বাঙালীর জন্য আজ স্মরণীয় হয়ে রয়েছে বেশ ক’জন গুণী মানুষের প্রয়াণ দিবস হওয়ার কারণেও-

বিজয়া মুখোপাধ্যায়: ১৯৩৭ সালের এই দিনে তৎকালীন অবিভক্ত বাঙলায় তিনি জন্মেছিলেন। তিনি ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা এবং একজন কবি। প্রবন্ধকার ও অনুবাদক হিসাবেও পরিচিতি ছিল তাঁর। সাংবাদিকতাতেও তাঁর অবদান রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ‘বিভাষা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “কৃত্তিবাস” কবিতা পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কবি বিজয়া মুখোপাধ্যায় ২০২০ সালের ২৬ জুলাই ৮৩ বৎসর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

সুশোভন ব্যানার্জী: ১৯৩৮ সালে তৎকালীন অবিভক্ত বাঙলায় জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তী চিকিৎসক। তাঁর প্রচলিত নাম ছিলো এক টাকার ডাক্তার। তিনি মাত্র এক টাকার বিনিময়ে অসহায় মানুষকে চিকিৎসা দিতেন। ২০২০ সালে তিনি তাঁর জীবদ্দশায় সর্বাধিক সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা করার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তাঁর নাম উঠে যায়। ওই বছরই ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে সম্মানিত করেন। ‘আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’ থেকে স্বর্ণপদকও পেয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালের ২৬ জুলাই তিনি পরলোক গমন করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর