ধর্ম ডেস্ক
একজন বিবাহিত মুসলিম নারীর বৈধ অধিকার দেনমোহর। দেনমোহর মূলত একটি সম্মানী—যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে, এর মূল উদ্দেশ্যই হলো নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। শরিয়তের উদ্দেশ্য হলো যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দেবে, যা তাকে সম্মানিত করে।
দেনমোহর আদায়ের গুরুত্ব
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, যদি তোমরা তাদের মোহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। -(সুরা মায়েদা. আয়াত, ৫)
নারীর দেনমোহরকে হালকা করে দেখা বা আদায়ের ইচ্ছা না থাকলে আল্লাহর সামনে জবাবদিহীতা করতে হবে। একটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনও নারীকে বিয়ে করলো এবং তার মোহর বাকি রাখলো এরপর সে ইচ্ছা করলো মোহর আংশিক বা একেবারেই আদায় করবে না তাহলে সে ব্যভিচারী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সঙ্গে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। (ইসলাহে ইনকিলাব, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা , ১২৭, কানজুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪৮)
দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ
ইসলামে দেনমোহর নির্ধারণের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ১০ দিরহাম অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দশ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই’ (বায়হাকি)। তবে মোহরের সর্বোচ্চ কোনও পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে রাসূলে আকরাম সা. বলেছেন, ‘সর্বোত্তম পরিমাণের মোহর হচ্ছে তা, যা পরিশোধ করা সহজসাধ্য’।
নগদ আদায় করা যায় এমন পরিমাণ উত্তম
তাই স্বামী তার সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনও পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে, তবে এক্ষেত্রে লৌকিকতা বা শুধু শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য অনেক বড় পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত হবে না, যা আদায় করা কষ্টকর হয়। লোক দেখানো ও ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে দেনমোহরের ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছু ধার্য করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামী শরিয়তে যৌতুক নেয়া যেমন বৈধ নয়, তেমনি বরপক্ষকেও বেশি চাপাচাপি করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
কিস্তিতে...
ইসলামী বিধান অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী এবং উভয়ের পরিবার মিলে এমন পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত যা নগদ আদায় করা যাবে। এটাই উত্তম। তবে যদি কেউ বেশি মোহর নির্ধারণ করে ফেলে এবং এর পরিমাণ এতোটা বেশি হয় যে তাৎক্ষণিক আদায় করা সম্ভব নয়, তাহলে তা কিস্তিতে হলেও আদায় করে দিতে হবে, ইসলামে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল কাদির : ৩/৩৭০, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৬/২৪৬)