পর্যটন নগরী কক্সবাজারেও ট্রেনে যাওয়ার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে। বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।তাহলে এটি এগোবে না পেছাবে এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটি হয়ত একদিন আগাতে বা পেছাতে পারে। মূলত, আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের দিন ঘোষণা করায় রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এটি নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে। রেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। এদিকে দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আমাদের রেলপথের কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে। আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে উদ্বোধন সম্ভব।পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্যে প্রস্তত ট্রেন: কয়েকদিনের মধ্যেই লাল সবুজ ট্রেন সমুদ্রনগরী কক্সবাজারের দিকে পরীক্ষামূলক যাত্রা করবে। এরই মধ্যে ২ হাজার ২০০ সিসির ইঞ্জিনের সঙ্গে ৬টি বগি প্রস্তুত। কোরিয়া থেকে আনা ট্রেনে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৬০ জন করে ৩৬০ জন। আগামী অক্টোবরের মাঝখানে পটিয়া রেলস্টেশন থেকে প্রথম ট্রায়াল রানের উদ্বোধন করা হবে এটি।পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ সংস্কার সম্পন্ন: কক্সবাজারের রেলপথ প্রকল্প উদ্বোধনের কথা চলতি মাসে (সেপ্টেম্বর) থাকলেও আগস্টের অতিবৃষ্টিতে এ রেললাইনের তিন কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সময় উদ্বোধনের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। তারপর রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে একমাসের মধ্যেই ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলে। একইসঙ্গে সাতকানিয়ার ত্রিমোহিনী এলাকায় রেলপথে দুটি কালভার্ট পর্যাপ্ত মনে না হওয়ায় ২০ মিটারের আরও তিনটি কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশনা দেয় রেল মন্ত্রণালয়। সে সময় রেল সচিব হুমায়ুন কবীর প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন অক্টোবর মাসের মধ্যে রেলপথটি উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করতে।রেল সচিব সে সময় বলেছিলেন, বন্যায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এতে কোনো প্রভাব পড়বে না। বন্যায় রেললাইনের তেমন ক্ষতি হয়নি। পানির কারণে স্লিপারের নিচ থেকে পাথর সরে গেছে। প্রকল্পের সর্বমোট অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে।প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ৯০ কিলোমিটার দৃশ্যমান। প্রকল্পের কাজ ৮৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের রেলপথের কাজ সম্পন্ন হলেও চলমান রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী অংশের মধ্যকার কর্ণফুলী সেতুর কাজ। এ সেতুতে ভারি ইঞ্জিন বহনের সক্ষমতা না থাকায় চলছে সংস্কার কাজ। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ট্রেন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু আরও মজবুত করা হচ্ছে। যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে ডিসেম্বরে আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্বোধনের কথা থাকলেও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে লাগতে পারে আরও এক মাস। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেই ডিসেম্বরে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দুটি ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা পূর্বাঞ্চলীয় রেল কর্তৃপক্ষের। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুটি প্রস্তাবনা রেল ভবনে পাঠিয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। প্রথম প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ঢাকা থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে ট্রেন আর কক্সবাজার স্টেশনে যাবে সকাল সাড়ে ৫টায়। ফিরতি ট্রেন সকাল ১০টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ছেড়ে ঢাকায় ফিরবে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ছাড়বে আর কক্সবাজার স্টেশনে সকাল সাড়ে ৯টায় যাবে, আর ফিরতি পথে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার ছাড়বে আর ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টায়।