নুরুল আবছার চৌধুরীঃ প্রায় ১৫ বছর আগে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের জনগণ যখন আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলো তখন এ দেশের মানুষের মনে এটুকু আস্থা ছিলো, শেখ মুজিবের মেয়ে কখনও বেঈমানী করবে না, দেশের অর্থ লুট করবে না, দুর্নীতিগ্রস্থ হবে না অন্যসব রাজনৈতিক দলের মতো জাতিকে নিরাশ করবে না। কথা রেখেছেন শেখ হাসিনা। গত ১৫ বছরে এ দেশের উন্নয়ন দেখে বিস্মিত হচ্ছে বিশ্ব মোড়লরাও। আমার লেখনিতে আমি উল্লেখ করতে চাই কেবল চট্টগ্রামের কথা। কিছু সংকট এ অঞ্চলে এখনও বিদ্যমান। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে জনশক্তির দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি।
রাষ্ট্রগঠনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে থিম নিয়ে এগুচ্ছে তাতে ডিজিটালাইজেশনে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট গভর্নেন্স ও স্মার্ট সোসাইটি গড়তে হলে দরকার প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের পথ হাঁটছে চট্টগ্রাম। এজন্য চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতকে স্মার্ট রূপে গড়ে তুলতে ৫০টি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এসব পরিকল্পনায় নিঃসন্দেহে সহায়ক হবে চট্টগ্রামের মেগা প্রজেক্টগুলো। বন্দর সমৃদ্ধ এই শহরের প্রাধান্য ছিলো ব্রিটিশদের কাছেও।
আরও পড়ুন সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন শেখ হাসিনা
ভারতবর্ষে ইংরেজ আমল থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তান আমলেও চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হতো। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালে বই-পত্র কিংবা সংবাদ পত্রের প্রতিবেদন-কলামে এই নগরকে বন্দর নগরী আখ্যায়িত করেছেন অসংখ্য লেখক। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে অবকাঠামোগত সংকটের কারণে সত্যিকার বাণিজ্যিক রাজধানী করা যায়নি চট্টগ্রামকে। গত ১৫ বছরে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এই তকমার জন্য উপযোগী হয়েছে চট্টগ্রাম। এখন শুধু গেজেট ভুক্ত হয়ে স্বীকৃতি অর্জনের অপেক্ষা। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ নজর ছিলো শেখ হাসিনা সরকারের। এ সময়ে বে-টার্মিনাল, টানেল, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, আউটার লিংক রোড, কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু এসব প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ থাকেনি আ. লীগের পরিকল্পনা। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এবং বাণিজ্যিক রাজধানীর সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে চট্টগ্রামে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি অর্থনেতিক জোনের। এগুলোর মধ্যে দেশের বৃহত্তম ইকোনমিক জোন হয়েছে মীরসরাইতে। শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মহাপরিকল্পনায় মীরসরাই ইকোনমিক জোনে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। সেখানে কারখানা স্থাপন করছে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোও। ইতোমধ্যে ভূমি বরাদ্দ পেয়ে, কার্যক্রমও শুরু করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামবাসীর জন্য আরেকটি বড় সুখবর হলো কর্ণফুলী নদীর পূর্বতীরে আনোয়ারা উপজেলার অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে বিনিয়োগ করবে চীনের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। অঞ্চলটিতে ওষুধ, তৈরি
পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাসায়নিক, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, প্লাস্টিক পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্ণেস ও সিমেন্টসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির কারখানা স্থাপিত হবে। সেখানেও কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার পাবে চট্টগ্রামবাসী।
এ কথা উল্লেখ করতেই হয়, চট্টগ্রাম জেলায় জনসংখ্যার আধিক্যতা বাড়ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। এ অঞ্চলের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাত এখনও অবহেলিত। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দাবি রয়েছে এখানে একটি সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় এবং মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের। প্রত্যাশা করছি, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আবারও নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা এই দুটো দাবি বাস্তবায়নে সম্মত হবেন।
লেখকঃ সম্পাদক, চাটগাঁর সংবাদ;
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক , চট্টগাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।