সাদ্দাম হোসেন: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ২৯০ নম্বর আসন চট্টগ্রাম ১৩। চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং কর্ণফুলি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ সংসদীয় আসনে দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিংয়ের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপির মতো অন্যান্য রাজনৈতিক দলও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতো জনপ্রিয় নয় এই আসনে। আওয়ামী লীগের বিপরীতে আসনটিতে বিএনপি একাধিকবার জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করলেও বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা একেবারে নড়বড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সরওয়ার জামাল নিজাম এ আসন থেকে তিনবার জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ২০১২ সালের পর থেকে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। চট্টগ্রামের অন্যান্য উপজেলায় সরকার বিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি লক্ষ্য করা গেলেও কর্ণফুলী-আনোয়ারায় বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে নমিনেশন সংগ্রহ করে চমক দেন মুস্তাফিজুর রহমান। একই সময় আনোয়ারার বিএনপিতে নতুন নেতৃত্বে দেখা যায় এই উপজেলার বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিনকে। বর্তমানে ঘুরেফিরে এই তিনজনের নাম উঠে আসলেও কোন্দলের কারণে আসনটি পুনরুদ্ধার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর একাধিক নেতাকর্মী চাটগাঁর সংবাদকে জানান, ‘আনোয়ারা উপজেলায় বিএনপির দুইটি কমিটি রয়েছে। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আবার তিনজন বড় নেতার তিনটি গ্রুপ বর্তমানে এই উপজেলায় সক্রিয় রয়েছে। এ মুহূর্তে কোন্দল নিরসন করা না হলে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি এ আসনে আশানুরুপ ফল করতে পারবে না।’
আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে বর্তমানে কর্ণফুলী-আনোয়ারা উপজেলায় সাংগঠনিক কাজ জোরদার করতে ব্যস্ত বড় রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। নির্বাচনের আরো বছরখানেক বাকি থাকলেও এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলের নিজের কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে জানান দিতে চাচ্ছেন নিজের অবস্থান। কিন্তু উপজেলা এবং সংসদীয় আসনকে কেন্দ্র করে বিএনপির এই তিন নেতার কোনো কার্যক্রম এখনও চোখে না পড়লেও তাদের গ্রুপিং রাজনীতি আনোয়ারাতে দৃশ্যমান।
কিন্তু বিষয়টি মানতে নারাজ বিএনপির নেতা মুস্তাফিজুর রহমান। চাটগাঁর সংবাদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বে প্রতিযোগীতা থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু এ মুহূর্তে কর্ণফুলী-আনোয়ারা বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই। আগামি নির্বাচনে দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান যাকে নমিনেশন দেবেন তার সাথে কাজ করব। আমি নিজেও নমিনেশন চাইব। আশা করি কোনো ভুল বুঝাবুঝি হবে না।’
আনোয়ারায় বিএনপির কোনো রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিটি কেন লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি দিচ্ছে না, যারা বিএনপি করে তাদের সাথে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শত্রুতামূলক আচরণ করা হচ্ছে।’
তারেক রহমান বিদেশে থাকলেও দলের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘ইনশাহআল্লাহ যদি নমিনেশন পাই এবং ভোটে জিততে পারি, তাহলে জনকল্যাণে কাজ করব। গত ১৫ বছরে আনোয়ারায় কোনো উন্নয়ন হয় নাই। বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে চাকরি দেয় নাই। বিএনপির এখন একটাই লক্ষ্য সরকার পতন করানো এবং সরকার গঠন করা।’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম ১৩ আসন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের ফলে পাল্টে গেছে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম জনপদের চিত্র। টানেলকে ঘিরে আনোয়ারা উপজেলা নতুন করে রূপ পাচ্ছে উপশহরে। এছাড়া পার্কি সমুদ্র সৈকতে অত্যাধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স, চায়না ইকোনমিক জোন, কাফকো, সিইউএফএল ও কেইপিজেড এর মতো শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় এ আসনটিকে অতীতের চেয়েও বেশি গুরুত্ববহ মনে করা হচ্ছে।